ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ি ঋণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে : সিপিডি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ডিসেম্বরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা দশ বছর আগে ছিল ৪২ হাজার ৭১৫ কোটি টাক। এর সঙ্গে পুনঃতফসিল ঋণসহ কু-ঋণ যোগ করলে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকায়। এর সঙ্গে অর্থ ঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলার বিপরীতে অনাদায়ী ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার ঋণ যোগ করলে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
 
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানী একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কি’ শীর্ষক এক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এসব তথ্য জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের অন্যতম মূল নিয়ামক হচ্ছে খেলাপি ঋণ। সেটার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অনেকখানি ক্ষরণ ঘটেছে। সেই ক্ষরণের কারণে ব্যাংকিং খাত এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পরও ব্যাংকিং খাতের প্রসার ঘটেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই অর্থনীতির আকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগ ও সাধারণ মানুষদের লেনদেনের জন্য আর্থিক খাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুধু ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করি, নন-ব্যাংকিং খাতেরও সমস্যা কম নয়।

মালিকানা বদলের পর থেকে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো আর্থিক সংকটে রয়েছে দাবি করে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ ধারার ব্যাংকগুলোয় নানা অনিয়মের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক তথ্য প্রকাশ করে না। যেসব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা কতটুকু সত্য তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।

ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় ব্যাপক অনিয়মের কারণে সব সূচকে অবনতি হয়েছে জানিয়ে বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিকল্প না থাকায় সাধারণ মানুষ ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা রাখছে। তবে আর্থিক অবস্থা ব্যাপকভাবে খারাপ হওয়ায় খাতটির ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমছে বলেও মনে করছে সিপিডি।

সিপিডির এই শীর্ষ কর্তা বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের ক্যাশ হোল্ডিংস কমেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো টাকা সংকটে ভুগছে।

ব্যাংকগুলোর সমস্ত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না দাবি করে প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা প্রকাশ করে না, তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা তথ্যের জন্য মিডিয়ার ওপরে নির্ভর করতাম, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের অভাবের কারণে ভুল নীতি গৃহীত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থা থেকে যদি টেনে তুলতে হয়ে, তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বিগত দিনে আমরা দেখেছি লাভের ব্যক্তিকরণ এবং ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করা।

দুর্বল ও সবল ব্যাংকে একীভূত প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, সরকারি ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার থেকে বহুবার অর্থ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে বার বার দেওয়া হচ্ছে। শুধু বেসরকারি ব্যাংক যেমন পদ্মা ব্যাংককে টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা রক্ষা হয়নি। এরূপ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যদি নিতেই হয়, তাহলে পৃথিবীর স্বনামধন্য এ্যাসেসমেন্ট কোম্পানিকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নিয়ে আসুন। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংকিং স্বাস্থ্য সেটা বিবেচনায় নিলে তারা আগ্রহী হবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশে অপ্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যমূলক সংকট তৈরি হয়েছে: মির্জা ফখরুল Nov 12, 2025
img
ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ১৩৯ Nov 12, 2025
img
৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু মিত্র চিহ্নিত করার দিন: তারেক রহমান Nov 12, 2025
img
দুইটি ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি Nov 12, 2025
img
ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে নাহিদ রানাকে Nov 12, 2025
img
বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মানবাধিকার বিষয়ক সুইডিশ দূত Nov 12, 2025
img
লাইসেন্স ও কাগজপত্র না থাকায় ডাকসু নেতার বাইক আটকে দিলেন সার্জেন্ট Nov 12, 2025
img
রণবীরের ‘ধুরন্ধর’ ট্রেলার লঞ্চ, শাহিদের শুটিং স্থগিত Nov 12, 2025
img
গণভোটের চেয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা বেশি জরুরি: তারেক রহমান Nov 12, 2025
img
গণভোটে বাধা কেন, ডাল মে কুচ কালা হে: এটিএম আজহার Nov 12, 2025
img
প্রবাসীরা ভোট দেওয়ার জন্য অ্যাপে নিবন্ধন করতে সময় পাবেন ৪ সপ্তাহ: ইসি Nov 12, 2025
img
আগামী নির্বাচন বানচালের জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে : নুর Nov 12, 2025
img
আত্মসমর্পণের পর জামিন পেল সাবেক বিচারপতিসহ ৩ জন Nov 12, 2025
img
জাহানারার অভিযোগের তদন্ত কমিটিতে যুক্ত হলেন আরও ২ জন Nov 12, 2025
img
রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ: রেলপথ মন্ত্রণালয় Nov 12, 2025
img
একটি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গভীর যোগাযোগ রয়েছে: রিজভী Nov 12, 2025
img
চট্টগ্রামে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের ৬৭০০ কোটি টাকার অর্থায়ন Nov 12, 2025
img
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একদম আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : তাসনিম জারা Nov 12, 2025
img
সালমানের খামারবাড়ির ভেতরের রহস্য ফাঁস করলেন শেহনাজ গিল Nov 12, 2025
img
মানুষের ভালোবাসার দল বিএনপি : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু Nov 12, 2025