আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, বিক্রি করি না : প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রতি ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সমঝোতা স্মারক সই করেছেন সেটা নিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন। সেটার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। বরং যারা অভিযোগ তুলে তারাই বিক্রি হয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেলপথ ব্যবহারের সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।
ইউরোপে তো এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো বর্ডার নেই, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে? এতে বরং তাদের যোগাযোগ সুবিধা বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা ১১টায় সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি দুই দফা ভারত সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ভারতকে রেলপথ ট্রানজিটের সুবিধা দেওয়ার সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ চালুর সমালোচনা হচ্ছে কেন?’ জবাবে প্রশ্নকর্তা বলেন, ‘বলা হচ্ছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিক্রির ষড়যন্ত্র চলছে। যারা অপপ্রচার চালায় তাদের মুখরোচক গল্প।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বিক্রির ওজনটা কীভাবে করা হয়েছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে তো ওজন মেপে হয় না? এখন তো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে। আগে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হতো। তো কীসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কীভাবে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত-একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর যেখানে মিত্র শক্তি হিসেবে সাহায্য করেছে, তারা কিন্তু সেই দেশ থেকে ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশান সৈন্য, এ রকম বিভিন্ন দেশ দেখলে দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। এখানে ভারত ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছে, যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন, তারা বিদেশে ফেরত যান তাদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন। ফেরত নিয়ে গেছেন, যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে। তাদের কাছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আমরা কিন্তু স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। ভারত কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছে।

সরকার প্রধান বলেন, এরপরে যারা বলে বিক্রি হয়ে যাবে। তাতে বিক্রিটা হয় কীভাবে? যারা এটা বলে, তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা। সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারত বিরোধী কথা বলেছিল, আর ভেতর দিয়ে তাদের পা ধরে বসে ছিল। এগুলো আমাদের নিজের দেখা ও জানা। তাই দেশ বিক্রির কোনো অর্থ হয় না। আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। সেই সার্বভৌম রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। এই যে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান আমাদের দেশের মানুষ। তারা চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্যই যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরীফে যায়, আবার বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তো আরও উন্মুক্ত হবে। কাজে বিক্রি আমরা করি না। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা বেচার জন্য অথবা ব্যবহার করুন আমাকে এ নিয়ে বসে থাকে। এটা হলো বাস্তবতা। শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল।

তিনি বলেন, একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী? রেল যে গুলো বন্ধ ছিল, তা আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যে সমস্ত জিনিস আমাদের দেশে নেই তা আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা সুবিধা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকব? সেটা হয় না। ইউরোপের দিকে তাকান-সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, কিছুই নেই। তাহলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এক সময় সেখানে নো-ম্যানস ল্যান্ড ছিল। এখন কিন্তু সেসব কিচ্ছু নেই। এখন সেসব উঠে গেছে। কাউকে বাদ দিয়ে নয় সব দেশ স্বাধীন দেশ। কোনো দেশ কারও কাছে বিক্রি করেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখব? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রয়োজন।

ভারতের সঙ্গে ওষুধশিল্পের চুক্তিতে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে ওষুধশিল্পের অনেক কাঁচামাল আমাদের আনতে হয়। কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো আমরা উৎপাদন করতে পারছি না। যদিও আমাদের ওষুধশিল্প অনেক উন্নত। বিভিন্ন দেশে আমরা রপ্তানি করি। প্রায় এক শ দেশে রপ্তানি করি। এরপরও কিছু কিছু ওষুধ থাকে যেটার শিল্প আমাদের দেশে ওইভাবে গড়ে ওঠেনি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ লাভবান হবেন। আমাদের দেশের অনেকেই চিকিৎসা নিতে ভারতে যান। সে জন্য আমরা ভিসা সহজ করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা কেবল উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে যত বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারব। যত বেশি আদান-প্রদান হবে, বাংলাদেশ ততই বেশি লাভবান হবে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। এর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করার টাকাও নেই আমার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর অনেক নোবেল জয়ী আমার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। ভেবে দেখেন, আমি আসার আগে কয়জন পার্বত্য চট্টগ্রাম যেতে পেরেছেন?

তিনি বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে আলাদা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। তাই এটা নিয়ে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের লেবারদের ২০০৬ সাল থেকে ওয়েলফেয়ার ফান্ডের একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। তখন লেবাররা মামলা করেছেন, সরকার করেনি। লেবাররা লেবার কোর্টে মামলা করেছেন, সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে, আমার কি দোষ? বরং আজকে তিনি যেখানে উঠেছেন, তার পেছনে আমিই তো সবয়েছে বেশি সহযোগিতা করেছিলাম। তিনি সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে আমার হাত দিয়ে। আমরা সবাই মিলেই তুলেছি, এখন দোষ আমার! যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে, তাই তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। ইউনুসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকার লাগেনি। গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি হয়েছিল জেনারেল এরশাদের সময়ে। একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, ড. ইউনূসকে এনে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হয়। এই ব্যাংক তার নিজের করা না। তিনি সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন পেতেন। ব্যাংকটি সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। টাকা-বেতন সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হতো।

শেখ হাসিনা বলেন চাকরিরত অবস্থায় এমনভাবে তিনি ব্যাংকটি পরচালনা করেছেন, যে এটা তার নিজেরই করা। ওই ব্যাংকের আইনে ছিল, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি চাকরিতে থাকতে পারবেন। ৬০ বছরের পরেও ১০ ড. ইউনূস আইন ভঙ্গ করে পদে ছিলেন। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক নজরে আনে। তখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও একজন উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী তাকে অনুরোধ করেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে, ইতোমধ্যে বেআইনিভাবে ১০ বছর পদে আছেন, আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না।

তিনি বলেন, ড. ইউনূস অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই হেরে যান। এখন তার বিরুদ্ধে যে মামলা তা সরকার করেনি।

সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা আমিই তাকে দিয়েছিলাম। কারণ গ্রামীণ ব্যাংক তখন পতনের দিকে যাচ্ছিল। প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, এরপর ২০০ কোটি, পরে আরও ১০০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকটা চালু রাখার জন্য সহায়তা করি। তিনি প্রস্তাব দিলেন গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা তাকে দিলে এখান থেকে যে লাভ আসবে, তা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ, গ্রামীণ ফোনের একটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কিনা। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা অনুদান এসেছে। সেখান থেকে কয়টি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গিয়েছে? ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছে, ট্যাক্স দেয়নি। তিনি যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, তা নিজেই প্রমাণ করেছেন। যখনি মামলা হয়েছে তখনি কিছু টাকা দিয়েছেন। যখন কিছু টাকা দিলেন, তখনই তো প্রমাণ হয়ে গেলো যে, তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমনকি গ্রামীণ ফোনের কাছ থেকেও কয়েক দফা এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,ড. ইউনূসের মাইক্রোক্রেডিট সামিট ক্যাম্পেইনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। আমিই কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি। আমিও ভাবতাম এটি মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি দেখলাম, দারিদ্র দূরীকরণ নয়, এটি দারিদ্র লালন-পালন করে। দিন-রাত কাজ করা দরিদ্রদের উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। যশোরের একটি এলাকায় হিলারি ক্লিংটনকে নিয়ে যে পরিবারগুলোকে মাইক্রোক্রেডিট দিয়েছিল, সেই পরিবারগুলো এখন কোথায়, জিজ্ঞাসা করেন। জমি-জমা বিক্রি করে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে সুদের চাপে।

দেশনেত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। এই জায়গায় কেউ আসতে পারবে না। কারো সাথে জেলাসি করি না। আমি এর, ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না। দেশ বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না।

অর্থপাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মানুষ লোভী হয়ে যায়। টাকা-পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ বাদ দিয়ে বিদেশে রাখতে গিয়ে পরে দেশ থেকে ভাগতে হয়। সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো। এতই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে, শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে লাভ হয় কি? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমলে আমরা সবচেয়ে বেশি বেসরকারি খাত খুলে দিয়েছি। হ্যাঁ, ব্যাংকিং খাতে কেউ ভালো চালাচ্ছে, কেউ খারাপ চালাচ্ছে।

কোনো সময় অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারে না। এটা চিরাচরিত নিয়ম। যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায়, সেটাকে সহযোগিতা করা বা একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটা ব্যাংককে একীভূত করা হয়। অর্থাৎ যারা সেখানে আমানত রাখে, তাদের রক্ষা করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটাই পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় এ দুই ইস্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করেছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছেন মমতা। তবে সেই চিঠিটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নিয়ে তার কিছু বলার নেই বলেও জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জি যে চিঠি তিনি তার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, এটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের নাক গলানোর কোনো দরকার নেই। কিছু বলার দরকার নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো, আবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও। অন্যান্য সব দলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো। ভারতের দল মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন নয়, মহাপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু ও আঞ্চলিক অংশীদার ভারত। দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীরভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, তিস্তা প্রজেক্ট কিন্তু আজকের না। আমার মনে হয় যুক্তফ্রন্টের সেই ২১ দফার মধ্যেও এটা ছিল। আমাদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে কিন্তু এটা ছিল যে তিস্তা প্রজেক্ট করতে হবে। সেই তিস্তা প্রজেক্ট করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে। আমাদের যৌথ কমিটি হবে। শুধু পানি ভাগাভাগি বিষয় না, গোটা তিস্তা নদীকে পুনর্জীবিত করে সেই উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা, সেটাই আমরা করব।

সরকারপ্রধান বলেন, গঙ্গা পানি চুক্তির জন্য আলোচনা হবে, টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে দেখবে, তারপর এটা হবে। নীল নদীর ড্রেজিং করলেই পানি সমস্যার সমাধান হয়। আমরা আমাদের দেশে শুরু করেছি। নদীর ড্রেজিং করার কারণে বন্যা হলেও এখন আগের মতো ক্ষতি হয় না।

ভারত সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত ও বিনিময় হয়। এছাড়া তিনটি নবায়িত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত ও বিনিময় এবং দুটি রূপকল্প ঘোষণা স্বাক্ষরিত ও বিনিময় হয়। ভবিষ্যত কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ১৩টি যৌথ কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ভারতে দু’দিনের সরকারি সফর শেষে শনিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এ ছাড়াও এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। এর আগে তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘আমরা আপনাদের নিরাশ করব না, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই’ সংবর্ধনায় ঋতুপর্ণা-আফঈদার প্রতিশ্রুতি Jul 07, 2025
img
নারী ফুটবলারদের সম্মানে মধ্যরাতে সংবর্ধনা দিল বাফুফে Jul 07, 2025
img
বিএনপির দুইপক্ষের অস্থিরতা, চিলমারীতে পুলিশের টহল জোরদার Jul 07, 2025
img
স্মৃতির ওজন নিয়ে রাম কাপুরের মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক Jul 07, 2025
img
মণিরত্নমের পর এবার রণবীরের সঙ্গে! কে এই সারা অর্জুন? Jul 07, 2025
img
পাকুন্দিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে এসিল্যান্ডসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা Jul 07, 2025
img
জীবন থাকতে বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদের কোন ধরনের পুনর্বাসনই আমরা হতে দিব না: হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 07, 2025
img
'তারেক রহমানের অপেক্ষায় গোটা বাংলাদেশ' Jul 07, 2025
img
জুলাই পদযাত্রা নিয়ে মুখ খুললেন ছাত্রনেতা রাফি Jul 07, 2025
img
নেতানিয়াহুর ওপর চটেছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী Jul 07, 2025
img
অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা পেতে মঞ্চ নাটকের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন Jul 07, 2025
img
এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে বিএনপি চাঁদা তোলে না: ফয়জুল করিম Jul 07, 2025
img
তেলের বাজারে বড় ঘোষণা, আগস্টে বাড়ছে উৎপাদন Jul 07, 2025
img
মাহভাশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন চাহাল Jul 07, 2025
img
আরে কারে ভয় দেখান? আমাদের হারানোর কিছুই নাই: হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 07, 2025
img
ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরলেন নারী ফুটবলাররা Jul 07, 2025
img
সাই পল্লবীর প্রতিবাদ: নারীর অবজেক্টিফিকেশনকে না Jul 07, 2025
img
বিশ্বকে বদলে দিতে ট্রাম্পের ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ Jul 07, 2025
img
টঙ্গীর তিন নেতাসহ চার বিএনপি নেতা বহিষ্কার Jul 07, 2025
img
টঙ্গী থেকে গ্রেফতার নেত্রকোণা জেলা আ. লীগের সহ সভাপতি Jul 07, 2025