শেরপুরে ৩৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা: দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, নিহত ৭

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের নেমে আসা পানিতে শেরপুরের পাঁচ উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ৩৫ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কবলে পড়েনি জেলার বাসিন্দারা। বন্যায় এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
 
রোববার (৬ অক্টোবর) নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নিম্নাঞ্চলের অন্তত দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নালিতাবাড়িতে সড়ক ভেঙে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। নতুন করে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও ৬টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার কারণে অনেকের বাড়ি-ঘর পানিবন্দি হয়েছে। এখন পর্যন্ত শেরপুরের ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৩৫ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি স্থানীয়রা। এর মধ্যে মহারশীর বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদ নগর, ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশাসহ প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শনিবার দিনভর স্পিডবোট, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধার অভিযান। এছাড়াও শুকনা খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসিদের মাঝে। এসব কাজে অংশ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

শনিবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছিল, পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী, কর্ণঝোড়া, মহারশী, ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে। এদিকে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে। তিন উপজেলায় এখনো অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন আবাদ, মাছের ঘের ও সবজি আবাদ।

কৃষি বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ এবং দেড় হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, জেলার তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ জন। দুর্গতদের উদ্ধারে শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। নতুন নতুন যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা তার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পাশপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণেও কাজ করা হচ্ছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা Oct 06, 2024
img
ঢাকার যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট Oct 06, 2024
img
ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা নেতানিয়াহুর Oct 06, 2024
img
পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ১.২ বিলিয়ন ডলার: সিপিডি Oct 06, 2024
img
গাজার কেন্দ্রীয় মসজিদে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১৮ Oct 06, 2024
img
শেরপুরে ৩৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা: দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, নিহত ৭ Oct 06, 2024
img
রুয়েট জাতীয়তাবাদী প্রকৌশলী শক্তি একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে Oct 05, 2024
img
আওয়ামী লীগের নেতারা তিনদিনে পালিয়েছেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 05, 2024
img
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার Oct 05, 2024
img
ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন রোগী ৯২৭ Oct 05, 2024