দেশে অভিনব কৌশলে বেড়ে চলেছে নানা প্রতারণা ও ছিনতাই। প্রতারণার নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে ভয়ংকর অপরাধী চক্র। বর্তমানে নতুন একটি পন্থা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভুক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন। প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভুক্তভোগী। বিষয়টি জাদুটোনার মতোই কাজ করে।
রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা তাহমিনা বেগম (ছদ্মনাম)। কিছুদিন আগে বাজার থেকে ফেরার পথে অপরিচিত এক নারী তার কাছে কোনো একটি ঠিকানা জানতে চায়। এ সময় তার সামনে আসে আরেক তরুণ। এরপর তারা তাহমিনার কাছে জানতে চায়, তার এলাকায় পরিচিত কোনো গরীব কিংবা এতিম কেউ আছে কি-না। তারা তাকে সাহায্য করবে। তাহমিনার বাসার পাশে একটি গরীব পরিবার থাকায় সে এ বিষয়ে ওই নারী ও তরুণের কাছে বিস্তারিত জানতে চায়।
কিন্তু মাত্র দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই তাহমিনার কী যেন হয়ে যায়। তিনি ওই অপরিচিত নারী এবং তরুণের কথা মতো তার কানের দুল, গলার চেইন এবং সঙ্গে থাকা কয়েক হাজার নগদ টাকা তুলে দেন।
নিজের সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে তাহমিনা বেগম বলেন, “আমি ওদের সঙ্গে কথা বলি কয়েক মিনিট। এরপরই কী যেন হয়ে গেল, আমার আর বুদ্ধি কাজ করছিল না। ওরা বলল, আন্টি আপনার গয়না আর টাকাগুলো ব্যাগে রাখেন। নাহলে হারিয়ে যেতে পারে। আমি ঠিক সেটাই করলাম। আমার মাথায় আসল না যে কেন আমি এগুলো খুলব, কেন হারিয়ে যাবে বা কেন ব্যাগে রাখব? তারপর ছেলেটা বলল আমার সঙ্গে আসেন। আমি তখন ব্যাগটা মেয়েটার কাছে দিয়ে ছেলেটার পেছনে হাঁটতে শুরু করি।”
তাহমিনা জানান, কিছুদূর হাঁটার পর তার সম্বিত ফিরে আসে। কিন্তু তখন তিনি আর ওই দুজনের কাউকে পাননি, ততক্ষণে তারা দুজনই সটকে পড়েছে।তিনি বলেন, “আমি এখনও বুঝতে পারি না কীভাবে কী হয়ে গেল। ওরা আমাকে কিছুই করেনি। শুধু কাছাকাছি ছিল এবং মেয়েটা মুখের সামনে হাত নেড়ে একটা ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিল।”
তবে, শুধু তাহমিনা বেগমই নন। প্রতারকদের কথা মতো নিজের জিনিস তাদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই হয়েছেন।
আর এসব ঘটনার পেছনে উঠে এসছে “স্কোপোলামিন” নামক এক ধরনের ড্রাগের নাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি তরল কিংবা পাউডার দুই ধরনেই পাওয়া যায়। এই ড্রাগ কাগজ, কাপড়, হাত এমনকি মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে লাগিয়ে এর ঘ্রাণ দিয়ে কিছু সময়ের জন্য যে কারো মানসিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া সম্ভব।