শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ এবং কখনও কখনও বিব্রতকর সমস্যা যা অনেকেই অনুভব করেন। যদিও খারাপ স্বাস্থ্যবিধি, পোশাক পছন্দ এবং মেডিকেল কন্ডিশন এর নেপথ্য কারণ হতে পারে, তবে একটি বিষয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়, তা হলো শরীরে কর্টিসলের মাত্রা। স্ট্রেস হরমোনের উচ্চ কর্টিসল অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি শরীরের দুর্গন্ধের কারণও হতে পারে। জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্টিসলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
কর্টিসল কী?
কর্টিসল হলো স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত একটি হরমোন। এটি বিপাক নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং স্ট্রেসের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করার মতো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ বা অন্যান্য কারণে যখন কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন এটি শরীরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে অতিরিক্ত ঘাম, শরীরের দুর্গন্ধ, ওজন বৃদ্ধি এবং হজমের সমস্যার মতো শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক করণীয়-
১. সূর্যের আলোর সংস্পর্শে দিন শুরু করুন
সকালের সূর্যালোক সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা কর্টিসল উৎপাদনে সহায়তা করে। এই প্রাকৃতিক আলোর সংস্পর্শে সেরোটোনিনও বৃদ্ধি হয়, যা সারাদিন ধরে চাপের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। সকালে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার লক্ষ্য রাখুন।
২. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন
ভেজা বাদাম এবং আখরোটের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করলে তা কর্টিসলের মাত্রা সহ হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে, এটি শরীরকে সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং ভারসাম্যহীন হরমোন থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. খাবারের আগে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন
খাওয়ার আগে ৩-৪ রাউন্ড গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরের চাপের প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে, কর্টিসলের মাত্রা কমায়। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস শরীরকে শিথিল করে এবং হজমে সহায়তা করে, ঘাম এবং শরীরের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী স্ট্রেস হরমোনের সক্রিয়তা রোধ করে।
৪. সন্ধ্যায় ক্যামোমাইল চা পান করুন
ক্যামোমাইল চায়ের শান্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চাপ এবং কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে সন্ধ্যায়। ঘুমানোর আগে এক কাপ ক্যামোমাইল চা পান করলে ভালো ঘুমও হতে পারে, যা হরমোনের ভারসাম্যের জন্য অপরিহার্য।
৫. খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন
ম্যাগনেসিয়াম হলো একটি খনিজ যা শরীরকে শিথিল করতে এবং কর্টিসল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কলা, কুমড়োর বীজ এবং বাদামের মতো খাবার ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ। খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো যোগ করলে তা চাপ এবং শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬. নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো ঘুম। ঘুমের অভাব কর্টিসোল উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। কর্টিসলের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে এবং শরীরের দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতি রাতে
৭-৮ ঘণ্টা বিশ্রামের ঘুমের চেষ্টা করুন।
৭. সারাদিন হাইড্রেটেড থাকুন
ঘাম এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ শরীরের সর্বোত্তম কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরের দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং দুর্গন্ধ কমাতে সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন।