রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস থেকে সৃষ্টিকর্তার বিধান পালন করেন। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, যা চিকিৎসা পরিভাষায় ‘হ্যালিটোসিস’ নামে পরিচিত। রোজা রেখে দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে ভিন্নমত থাকায় অনেকেই তা এড়িয়ে যান। তবে দন্ত চিকিৎসকদের মতে, মুখের দুর্গন্ধের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে, এবং সঠিক মুখের যত্ন নেওয়া জরুরি। এটি বড় কোনো রোগের উপসর্গও হতে পারে। সাধারণ কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই এই সমস্যা এড়ানো যায়।
রোজায় মুখে দুর্গন্ধের কারণ
দীর্ঘসময় কিছু না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে শর্করা বিপাক কমে গিয়ে চর্বি বা ফ্যাট বিপাক বেড়ে যায়। ফলে মুখে গন্ধ হয়।আর রোজারত অবস্থায় মুখের লালাগ্রন্থি কম সচল থাকার কারণে লালা নিঃসরণ কমে যায়। এভাবে মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার বাইপ্রোডাক্ট (উপজাত) থেকে মুখে গন্ধ আসে। আর এ সময় যদি মুখের পরিচ্ছন্নতাবিধি না মানা হয়, তাহলে দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
এ ছাড়া অনেকে সঠিকভাবে এ সময় মুখের পরিচ্ছন্নতাবিধি মেনে চলেন না বা মুখের ভেতর ভালো করে পরিষ্কার করেন না, যার কারণে দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
রোজায় দাঁত ও মুখের যত্ন যেভাবে নেবেন
সাধারণত আমরা দুই বেলা সকাল ও রাতে দাঁত ব্রাশ করে থাকি। সে ক্ষেত্রে রমজানেও ইফতার ও সাহ্রির পর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা দরকার। ইফতারের পর না হলেও সন্ধ্যা রাতে দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। তবে সাহরির পরপর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ ও মুখের ভেতর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। না হয় মুখে জীবাণুর আধিক্য হ্রাস পাবে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে করণীয়
কয়েকটি বিষয় মেনে চললে রোজা রেখেও মুখের দুর্গন্ধ এড়াতে সম্ভব। চলুন জেনে নেই রমজানে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কী কী করা উচিত-
ইফতারের পর থেকে সাহ্রির আগ পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করা উচিত। এ ছাড়া শরবত বা ইসবগুলের ভুসিও খাওয়া যেতে পারে। এতে পেটও ভালো থাকবে।
গুল বা তামাক একদম খাওয়া উচিত নয়। ধূমপান ত্যাগ করা উচিত, কারণ ধূমপান মুখের দুর্গন্ধ বাড়ায়।
দাঁত মাজার পর মুখ ধোয়ার জন্য মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
খাবারের অবশিষ্টাংশ দাঁতের গোড়ায় আটকে থেকে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এ জন্য ফ্লস ব্যবহার করুন।
অনেকেই জিহ্বা পরিষ্কার করেন না। এর ফলেও কিন্তু মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার করাও জরুরি।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ রোধ করতে রোজা ভাঙার সময় পেঁয়াজ, রসুন ও মসলাজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। এগুলো মুখে অপ্রীতিকর গন্ধের কারণ হতে পারে। এগুলোর বদলে তরমুজ ও শসার মতো পানির পরিমাণ বেশি এমন খাবার খান।
রোজা ভাঙার পর দাঁত ব্রাশ করার আগে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করা ভালো। এটি মুখের লালাকে প্রাকৃতিকভাবে যেকোনো খাবারের কণা পরিষ্কার করার জন্য যথেষ্ট সময় দেয় এবং মুখকে তার স্বাভাবিক পিএইচ স্তরে ফিরে যেতে দেয়।
ডিহাইড্রেশন এড়াতে কফি এবং চায়ের মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকা ভালো। চিনিযুক্ত পানীয় মুখের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি বাড়ায় এবং নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এর বদলে ভেষজ চা খেতে পারেন।
লবণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে সতেজ থাকে মুখ। এই প্রক্রিয়া প্রদাহ কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে। উষ্ণ পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচা করুন।