মহেড়া জমিদার বাড়ি: এক অপূর্ব নিদর্শন

টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদার বাড়ি আধুনিক নির্মাণশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। এটি টাঙ্গাইল সদর থেকে ১৮ মাইল পূর্বে এবং মির্জাপুর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। আধুনিক স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত এই বাড়িটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।

জানা গেছে, বুদাই সাহা, বদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা এবং কালীচরণ সাহা ছিলেন চার ভাই। ১৮৯০ সালে এই চার ভাই মিলে গোড়াপত্তন করেন মহেড়া জমিদারির। প্রথমে সাহা পদবী নিয়ে জমিদারি শুরু করলেও পরবর্তী প্রজন্ম রায় চৌধুরী পদবী গ্রহণ করেন।

আট একর ভূমির উপর নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি চারটি প্রধান ভবনে বেষ্টিত। সেগুলো হচ্ছে- মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ ও কালীচরণ লজ।

বাড়িটিতে প্রবেশের প্রথমেই পশ্চিম দিকে অবস্থান মহারাজ লজের। দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটির সামনে রয়েছে বিশাল বাগান। ভবনটির সম্মুখভাগে বিভিন্ন কারুকাজ করা রয়েছে।

এর পরেই রয়েছে আনন্দ লজ। দুইতলা বিশিষ্ট এই ভবনের নিচ তলা বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভবনের পাশেই রয়েছে পাসরা পুকুর।

বাড়িটির পূর্ব প্রান্তে অবস্থান চৌধুরী লজের। দ্বিতল এই ভবনে মোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে। এই ভবনের পাশেই রয়েছে রানী মহল, অতিথি ভবন।

চৌধুরী লজের পাশেই অবস্থান করছে কালীচরণ লজ। ভবনটি একতলা বিশিষ্ট । এছাড়াও বাড়িটিতে রয়েছে রানী মহল, বাসভবন, কাছারি ভবন, জাদুঘর, পুকুর, মাঠ, ফোয়ারা প্রভৃতি।

বাড়িটিতে প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ গেট। বাড়ির দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। যার নাম বিশাখা সাগর। যেটা জনসাধারণের ব্যবহার কতো। এছাড়া নিজেদের ব্যবহারের জন্য ভবনের পিছনে খনন করা হয় পাসরা পুকুর, রানী পুকুর। এখানে রয়েছে বিশাল বাগান, আম্রকানন। বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্য কিছু কৃত্রিম স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে দোলনা, মাছ, পাখি, জীব-জন্তু ইত্যাদি। এখানে আছে একটি শহীদ মিনার। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পুকুরে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ।

১৯৭১ সালে পাক বাহিনী এই বাড়িটিতে আক্রমণ করে। সে সময় হামলা চালিয়ে পাঁচ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদাররা। হামলায় বাড়িটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই সময় জমিদাররা বাড়িটি ত্যাগ করে চলে যায়।

 

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সরকার জমিদার বাড়িটিকে সংস্কার করে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। পরে ১৯৯০ সালে বাড়িটিকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।

প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে। এখানে রয়েছে অনুমতি নিয়ে পিকনিক করার সুবিধা। বিভিন্ন চলচ্চিত্র, নাটকের শ্যুটিং স্পট হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাড়িটিতে প্রবেশে দিতে হবে ২০ টাকা প্রবেশ ফি।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসযোগে টাঙ্গাইল জেলার নটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। এজন্য বেশ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। ভাড়া ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি যোগে মহেড়া জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা: জমিদার বাড়িতেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। জমিদার বাড়িতে থাকতে হলে খরচ হবে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

খাবার: জমিদার বাড়িতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্যান্টিন। যেখানে স্বল্প মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025
img
জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি আগামী সোমবার Jul 01, 2025
img
পাকিস্তানে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম Jul 01, 2025
img
আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আরেক মেয়াদে টিটুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করল বাফুফে Jul 01, 2025
img
জাতীয় দলের নতুন নির্বাচক হিসেবে শিপনকে চায় বিসিবি Jul 01, 2025
ফেসবুক পোস্টে এই দিনটি স্মরণ করলেন উমামা ফাতেমা Jul 01, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের মায়ের দোয়া নিয়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু Jul 01, 2025
img
‘রামায়ণ’ এর শেষের দিনে চোখের জল আটকালেন না রণবীর! Jul 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু Jul 01, 2025
img
স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি : প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আগামী ৫ দিন টানা বৃষ্টির আভাস Jul 01, 2025
img
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করল পাকিস্তান Jul 01, 2025
img
সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মব হয়েছে : মোশাররফ আহমেদ Jul 01, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩ হাজার, হাসপাতালে ২১৭ জন ভর্তি Jul 01, 2025
img
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে, জুলাই ক্যালেন্ডার উদ্বোধনে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
বিসিবি ছাড়ছেন সামি, জানালেন কারণ Jul 01, 2025
img
আসিফ মাহমুদের বিচার করা উচিত : নিলুফার মনি Jul 01, 2025