মৃত্যুর ৭ মাস পর বাবা হলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সেলিম

হাসপাতালে নবজাতকের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন সবাই কেঁদে উঠলেন। নবজাতকের জন্মের মুহূর্তে আনন্দের পরিবর্তে শোকার্ত আহাজারি ও বিলাপ পরিবেশ ভারী করে তুলল। শহীদ সেলিম তালুকদারের অনুপস্থিতিতে সবাই শোকমগ্ন হয়ে পড়েন এবং স্মৃতিচারণ করেন।

নলছিটির শহীদ সেলিম তালুকদারের (২৮) স্ত্রী সুমী আক্তারের ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে শনিবার (৮ মার্চ) রাত ৮টার দিকে। ঝলকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পান।

নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই নিহত হন। অথচ এর তিনদিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ৮ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা।

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সুমী আক্তারের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়, কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম। মৃত্যুর সাত মাস সাতদিন পর সেলিমের উত্তরাধকিার আসল পৃথিবীতে।

সেলিম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় সেলিমকে।

সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজ।

সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।

সুমী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচব শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচব। সন্তানকে তার পরিচয় দেব।’

ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকত তাহলে প্রথম সন্তান, কত আনন্দ পেত। তা সেলিমের ভাগ্যে নেই।’

সেলিনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি।’ তিনি ছেলের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান। 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পিএসসি সংস্কারে ১১ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চাকরি প্রত্যাশীদের Jul 12, 2025
img
আইএসএল স্থগিত করল ভারতের ফুটবল ফেডারেশন Jul 12, 2025
img
হত্যাকারী যে-ই হোক তাকে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে : আমিনুল হক Jul 12, 2025
img
সরকার কেন এসব ঘটনা ও নৈরাজ্যকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, প্রশ্ন তারেক রহমানের Jul 12, 2025
img
টেনিস কোর্টে পার্টনার হিসেবে ধোনিকে চাইলেন সুর্যকুমার Jul 12, 2025
img
বিএনপিতে চাঁদাবাজদের জন্য কোনো জায়গা নেই: দুলু Jul 12, 2025
অগণতান্ত্রিক চক্রান্তে সতর্ক থাকার বার্তা যুবদল সভাপতির Jul 12, 2025
img
শহীদ ইয়ামিনকে হত্যার আগে গুলি করা পুলিশ সদস্য গ্রেফতার Jul 12, 2025
img
রাশিয়া নিয়ে সোমবার ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা’ দেবেন ট্রাম্প Jul 12, 2025
মিডফোর্ডের ঘটনায় বিএনপিকে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুঁশিয়ারি Jul 12, 2025
img
অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ বন্ধে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স চুক্তি Jul 12, 2025
img
সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন প্রেসসচিব Jul 12, 2025
img
প্রতিটি হামলার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন জড়িত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন Jul 12, 2025
img
ফেনীতে বন্যার পানি নামছে, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতি Jul 12, 2025
পুলিশের সুপারশপ ঘুরে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন আইজিপি Jul 12, 2025
চট্টগ্রামে ১১ খণ্ডে বিভক্ত লাশ! স্ত্রীর মরদেহ কমোডে ফ্লাশ করলো স্বামী! Jul 12, 2025
"বাবু খেয়েছো? জিগ্যেসের জন্যতো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বানাই নাই!" Jul 12, 2025
img
'ভিডিওতে থাকলেও আমি কাউকে মারিনি' মিডফোর্ডের ঘটনার আসামী টিটন Jul 12, 2025
img
অতিরিক্ত সচিবসহ তিনজনকে ওএসডি Jul 12, 2025