ঠাকুরগাঁওয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনায় ১২ ঘণ্টা পর থানায় মামলা হয়েছে। শিশুটি প্রাইভেট পড়তে গিয়ে এই ঘটনার শিকার হয়। এ মামলায় এজহারভুক্ত আসামি মোজাম্মেল হক মানিককে গ্রফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১১টা ৫৫মিনিটে ভুল্লী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক মানিক জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ি মাদারগঞ্জ হাজিপাড়া গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দীনের ছেলে এবং কচুবাড়ি মাদারগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
গ্রফতারের পর রাত সাড়ে ১১টায় অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিককে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে ভুল্লী থানা পুলিশ। এ সময় ক্ষিপ্ত জনতা তাকে দেখার জন্য হাসপাতালের চারপাশে ভিড় জমান। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কড়া নিরাপত্তায় ওই শিক্ষককে থানায় নেওয়া হয়। শিশু ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় তোলেন নেটিজেনরা। তারা মন্তব্য করে বলেন, স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিককে শুধু গ্রফতার করলেই হবে না তার যাতে কঠোর শাস্তি হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে। অন্যথায় তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ।
এর আগে, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল। পরে মামলা হলে তাকে গ্রফতার দেখানো হয়।
অন্যদিকে, স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় রোববার বেলা ১১টায় জেলা শহরের চৌরাস্তায় ও ভুল্লী থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করবেন বলে ঘোষণা দেন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে ভুল্লি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ভুল্লী থানায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে একজনের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলাটি এরইমধ্যে রুজু করা হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আসামিকে আদালতে তোলা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। প্রতিদিনের মতো প্রাইভেটে যায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এ সময় সুযোগ বুঝে একটি কক্ষে নিয়ে পাশবিক নির্যাতনের পর ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় পাষণ্ড শিক্ষক। পরবর্তীতে শিশুটির চিৎকার-চেচামেচিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসার আগেই ওই শিক্ষকের লোকজন তাকে উদ্ধার করে জেলা শহরের সেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসে। গোপনে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করার কথা জানতে পেরে সাংবাদকর্মীরা ছুটে গেলে দ্রুত সময়ে শিশুটি জেনারেল হাসপাতালে হস্তান্তর করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
এ সময় সংবাদকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন ওই প্রতিষ্ঠানের সবুজসহ ধর্ষকের দালালরা। ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে জেলার অন্যান্য গণমাধ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে তারা পালিয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে অনৈতিক কাজের চিকিৎসা দিয়ে মোটা অংঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন জড়িতরা। এরইমধ্যে ভুক্তভোগীর স্বজনরা এসে মেয়েটিকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। পরবর্তীতে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা দ্রুত ছুটে যান হাসপাতালে, ঘটনা পর্যালোচনা করে ভুক্তভোগীকে সহায়তার পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
আরএ/এসএন