চুরির অপবাদে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর আগুন

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে মোবাইল চুরির অপবাদে এক যুবকের ওপর চালানো হয়েছে পৈশাচিক নির্যাতন। মারধরের পর তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে নির্যাতিত যুবকের পরিবার।

এই ঘটনার শিকার জাহেদ মিয়া বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) হবিগঞ্জ আদালতে নির্যাতনকারী ১৩ জনের নামে মামলা করেছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আলী মামলাটি আমলে নিয়ে বাহুবল থানার ওসিকে এফআইআর করার আদেশ দিয়েছেন। নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া (২৮) হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের বাড়ি থেকে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়।

এরপর সন্দেভাজন হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে শহীদুল মিয়াকে (৩০) আটক করে পেটানো হয়। পরে বনদক্ষিণ গ্রামের জাহেদ মিয়াকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে তার শরীরে পেট্রল দিয়ে দেওয়া হয় আগুন। এ সময় চুরির দায় স্বীকার করতে চাপ দেওয়া হলে জাহেদ তা অস্বীকার করেন।
নির্যাতন বন্ধের জন্য বারবার আকুতি জানান জাহেদ। দীর্ঘক্ষণ নির্যাতনের পর তার পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের মূল্য পরিশোধের শর্তে তাকে ছাড়িয়ে নেন। পরে ভর্তি করা হয়েছে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, জাহেদের শরীরের প্রায় ১৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজন পড়তে পারে অস্ত্রোপচারের।

আদালতে জাহেদ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আমারে মোবাইলে কল দিয়ে ডেকে নিয়ে মেহগনিগাছের সাথে বাইন্দ্যা (বেঁধে) মারছে। শরীরে আগুন লাগাইয়া দেওয়া হইয়াছে। পরে আমার দাদা সব টাকা দেওয়ার কথা বলে ছাড়িয়ে নিয়েছেন।’

জাহেদ মিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুতুব উদ্দিন জুয়েল বলেন, জাহেদ মিয়া পেশায় দর্জি। মোবাইল ফোন চুরি করার মতো অবস্থা তার নয়। যেভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। বিজ্ঞ বিচারক ভিকটিমকে দেখে এবং ঘটনার গুরুত্ব বুঝে মামলাটি এফআআইআর এর আদেশ প্রদান করেছেন।

তিনি আরো বলেন, এই মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলো বনদক্ষিণ গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, আ. মালিক, ছালিক মিয়া, মোজাহিদ মিয়া, আমীর আলী, আলমগীর, যমুনাবাগ গ্রামের রুয়েল মিয়া, সোহেল মিয়া, কবির মিয়া, কাজল মিয়া, তাজল মিয়া, সুমন মিয়া ও জামাল মিয়া।

এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে ঘটনাটি দেখেছি। পরে জানতে পেরেছি মামলা হয়েছে। থানায় আসলেই মামলাটি রেকর্ড করা হবে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

এমআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

শেখ হাসিনা,লাকী ও ইমরান এইচ সরকারকে নিয়ে যা বললেন হুমাম কাদের Mar 14, 2025
এক দশকে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক রমজানের বাজার Mar 14, 2025
যেকারনে বাজেটের ব্যয় থেকে বাদ যাচ্ছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা Mar 14, 2025
মাহফুজ আলমের মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত Mar 14, 2025
যে কারনে আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ল ৩ বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা Mar 14, 2025
ক্ষমতার ৫০ দিনেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ট্রাম্পের যত কান্ড! Mar 14, 2025
img
আর কেউ যেন ধর্ষণের মতো অপরাধের সাহস না পায় : তারেক রহমান Mar 14, 2025
অবেগে ভাসিয়ে মাহমুদুল্লাহকে স্মরন করলো মাশরাফি সাকিবরা Mar 14, 2025
img
সিনেমা হলে সুপারহিরো স্টাইলে ক্ষুদে ভক্তকে বাঁচাল নোরার দেহরক্ষী Mar 14, 2025
img
ক্রাচ নিয়ে রাজস্থানের অনুশীলনে দ্রাবিড় Mar 14, 2025