এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড় সুবিধা উঠে যাবে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা কমবে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নন।

গতকাল রাজধানীর এফডিসিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল গোঁজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থনৈতিক ডেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম অগ্রগণ্য দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তারা মনমতো ডেটা ব্যবহার করত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন।

তিনি বলেন, চীনের ঋণের ব্যাপারে সব সময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়ায় সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কি না?

তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিয়ে এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল বিগত সময়ে। সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দিত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে প্রমোদভ্রমণ করা হয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য কখনো জানতে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণে ঋণ আদায় হতো, তার চেয়ে বেশি অবলোপন হতো। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ তারকা হোটেলে বসে সুদহার ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিত। সরকার, কিছু রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই চার চক্রের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী সরকার।

যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, গত এক দশকের বেশি সময় সরকার যে ডেটা ম্যানিপুলেট করেছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য তা মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বিগত সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, এফডিআই কমে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতিসহ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৬-এ বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হাতে আছে। তাই এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে দেশের মর্যাদা আরও বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ বাড়বে, অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে।

এফপি/এস এন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন পুতিন! Mar 16, 2025
img
মাছের যেই বিশেষ অংশ রপ্তানি হয় কোটি টাকা মূল্যে Mar 16, 2025
img
ঈদযাত্রায় নৌ-পথের নিরাপত্তায় যেসব পদক্ষেপ নিলো বিআইডব্লিউটিএ Mar 16, 2025
img
আমিরের পর্দা-বিরতি কাটছে এই জুনে Mar 16, 2025
img
বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে Mar 16, 2025
সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা Mar 16, 2025
২৬শে মার্চ চীন সফরে যাবেন ড. ইউনুস, যা জানালেন প্রেস সচিব Mar 16, 2025
যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঈদে লঞ্চে নৌ-পথে বাড়তি সতর্কতা Mar 16, 2025
মাছের পিটুইটারী গ্ল্যান্ড রপ্তানিতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা Mar 16, 2025
২৪ এর শ'হী''দ ও আহ'ত পরিবারের পাশে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন Mar 16, 2025