করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে একজন প্রবাসী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে গত ১৭ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন। তবে ব্যক্তির নাম ও পরিচায় কিছুই বলেননি তিনি। পরিচয় জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশনগুলো নিতে হবে। অ্যাকশন নেওয়ার পরে আপনারা অটোমেটিক্যালি জেনে যাবেন।
এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। কোনও প্রবাসী শ্রমিক নয়, চীন থেকে ৭২১ কোটি টাকা প্রবাসী আয়ের নামে অর্থ আনা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ১৮০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। মূলত কালো টাকা সাদা করতেই ওই ব্যবসায়ী প্রবাসী আয়ের নাটক সাজিয়েছেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান নামের ওই ব্যক্তির দেশে আবাসন ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তও ছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, ওই ব্যবসায়ী ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর একজন করদাতা। তিনি বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তার কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ওই অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। বরং উল্টো নগদ প্রণোদনা নিয়েছেন। বর্তমানে ওই ব্যবসায়ীর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই ফারুকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
আয়কর গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, ফারুকী চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং চায়না শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফশোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পেয়েছেন।
এরই মধ্যে ফারুকী হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আলোচিত ব্যবসায়ী নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ৭২১ কোটি টাকা এনেছেন। যা থেকে ১৮০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে এ বিপুল অর্থের কোনও করই পরিশোধ করা হয়নি।
কর অঞ্চল-৫–এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেই ২৬৯ কোটি টাকা দেশে আসে। তার আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৭৭ কোটি ও ৮১ কোটি টাকা এসেছে।
এছাড়া অতীতে আরও ৪ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর নথিতে পুরোটাই প্রবাসী আয় হিসেবে দেখানো হয়। এই সময়ে কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসএন