বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। আমি অনুরোধ করব এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেওয়ার। যাতে সবাইকে নিয়ে সামনের পথ এগোতে পারি।বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ পেলেও এখনও গণতন্ত্রের দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের মূল আকাঙ্ক্ষা।
ঐক্যে জোর দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিরসন করা। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দলের ৩১দফা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এসময় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনও ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দোসররা বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে গিয়েছে। আমরা যেটা বলেছি, ফ্যাসিবাদী সিস্টেমটা পাল্টাতে হবে। বাংলাদেশের নেতৃত্ব আগামীতে যার হাতেই যাক না কেন, একটি পরিবর্তিত ব্যবস্থা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, একটি কথা বলা হচ্ছে যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন (ইনক্লুসিভ ইলেকশন), আমি মনে করি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার মত, দেশের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার মত রাজনৈতিক দল বা পক্ষ বাংলাদেশে রয়েছে। ৫ আগস্ট যে শক্তিকে বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত করেছে, মুজিববাদ ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে, আগামীতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নির্বাচনে সেই মুজিববাদী রাজনীতির কোনো স্থান হবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, একটি বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে, সেই বিচারের আগে (রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ) প্রশ্নই উঠে না। আমি রাজনৈতিক দলের প্রতি এই আহ্বানটাও রাখবো যেন এই বিষয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতে আসতে পারি। আমরা সবসময় এমন এক বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছি, যেখানে রাজনৈতিক শক্তিগুলো, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, নীতিগত পার্থক্য, সমালোচনা থাকবে। কিন্তু সবাই একসঙ্গে বসতে পারবো, আলোচনা করতে পারবো দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো তাহের বলেন, আজকে বাংলাদেশ একটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ৫ আগস্টে আমরা একটি বিশাল সফলতা পেয়েছিলাম। তার মূল ছিল সব শ্রেণিপেশার মানুষের ঐক্য। আমরা সবাই প্রতিটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়ার জন্য এখনও জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু’র সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল অব. অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ। এতে দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
ইফতার মাহফিলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, জেএসডির সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমআর