রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৪২ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত এনবিআরের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। যদিও আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় সামান্য বেড়েছে (পৌনে ২ শতাংশ), তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়েছে রাজস্ব আহরণে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, জুলাই-অগাস্টের রাজনৈতিক আন্দোলন, সহিংসতা এবং ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আহরণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পুরো অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের মাঝপথে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৭১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে; যা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।
রাজস্বের এ ঘাটতি কাটাতে সরকার সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে। পরে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের বাধা ও দাবির মুখে বহু পণ্যেই সেখান থেকে ফিরে আসার তথ্যও দিয়েছে এনবিআর।
২০২৪ সালের জুনে বাজেট ঘোষণার পর মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভের পতনসহ অর্থনীতিতে নানা সংকট শুরু হয়। বাজের পাসের দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এর ধারাবাহিকতায় অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
আন্দোলনের ধাক্কা ও সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনসহ অর্থনীতির সব সূচক ধীর হয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ কমার ধারাও অব্যাহত থাকে।
তবে ডিসেম্বরে এসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে দেখা গেছে রাজস্ব আহরণ। এরপর একই ধারায় ছিল জানুয়ারিতেও। ফেব্রুয়ারিতে তা ধরে রাখলেও সেটি আগের মাসের চেয়ে ধীর হয়ে পড়েছে।
মাসের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে; ডিসেম্বরে যা ছিল ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ আগের দুই মাসের চেয়ে ধাক্কা খেয়ে বেড়েছে প্রায় পৌনে ২ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় দেখেছে ক্ষমতার পালাবদলের মাস অগাস্ট। ওই মাসে তিন দিন সরকারবিহীন ছিল দেশ, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
সরকার পতনের পর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির সদস্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় ব্যবসার পরিবেশ ছিল নাজুক।
ব্যবসায়ীরা শুল্কায়ন করেও মাল খালাস ও গুদামে বা উৎপাদনস্থলে আনার সাহস করছিলেন না। এর প্রতিফলন দেখা গেছে অগাস্ট মাসের রাজস্ব আদায়ে। এ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে এর পরে সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে নভেম্বরে। এ সময়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের শঙ্কা না দেখা গেলেও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এসএস/এসএন