সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার আহ্বান বাংলাদেশ উপেক্ষা করেই চলেছে: বিক্রম মিশ্রি

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে সুরক্ষা প্রদানে ভারতের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে আহ্বান জানানো হলেও মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তা উপেক্ষা করেই যাচ্ছে বলে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্টারি প্যানেলকে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়ে, বুধবার শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন ভারতের পার্লামেন্টারি ওই প্যানেলে পার্লামেন্ট সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, সাগরিকা ঘোষ, রাজীব শুক্লা, রবিশঙ্কর প্রসাদ, দীপেন্দর হুডা, নবীন জিন্দাল ও ওয়াইএস অবিনাশ রেড্ডি উপস্থিত ছিলেন।

বিক্রম মিশ্রি প্যানেলকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ক্রমাগত আহ্বান জানানো সত্ত্বেও মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংখ্যালঘুদের ওপর পদ্ধতিগত নির্যাতনের’ বিষয়টি স্বীকার করেনি এবং ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দেশজুড়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা এবং প্রকৃতিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

একইসঙ্গে গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ইসলামী জঙ্গিদের ‘ক্রমাগত মুক্তি দেওয়া’ নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একে আইন-শৃঙ্খলা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে ভারত সরকার। ইসলামী খিলাফতের আদর্শ প্রচারকারী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক শূন্যস্থানে প্রবেশ করেছে বলেও মনে করে ভারত।

বিক্রম মিশ্রি প্যানেলকে আরও জানান, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকারের অন্য উপদেষ্টারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগকে গণমাধ্যমের ‘অতিরঞ্জন’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের যুক্তি, এগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা নয় এবং হামলায় নিহতরা আওয়ামী লীগ কর্মী, যারা ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের’ শিকার।
 
 পার্লামেন্ট সদস্যরা এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এই কর্মকর্তার কাছে কিছু প্রশ্নও করেন। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গুরুত্ব কোথায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখার সুবিধা কী এবং ভারতকে তার বক্তব্যের সমর্থনকারী হিসেবে দেখানো সীমান্তের ওপারে মানুষের কাছে কী বার্তা দেবে– এসব বিষয়ে জানতে চান।

রবিশঙ্কর প্রসাদ পররাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ কে চালাচ্ছে। ওয়াইসি মন্তব্য করেন, অন্য দেশে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারতের জোর দেওয়া ভারতেও বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে সংখ্যালঘু রয়েছে।

ওয়াইসি আরও পরামর্শ দেন, যেহেতু পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাংলাদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাই প্রধানমন্ত্রীরও মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করা উচিত এবং নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত।

ব্যাংককে মোদী-ইউনূস বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

প্যানেলকে ব্রিফিংকালে বিক্রম মিশ্রি জানান, আগামী সপ্তাহে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

মিশ্রি জানান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নেবে, তবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

এমআর/এসএন

Share this news on: