মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বোমা হামলার হুমকির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। ট্রাম্প বোমা হামলা চালালে তাঁরা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে জবাব দেবে, বলছে দেশটি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল রোববার (৩০ মার্চ) ট্রাম্প বলেন, পরমাণু ইস্যুতে ইরান আমেরিকার শর্ত মেনে না নিলে দেশটিতে বোমা হামলা চালাবে আমেরিকা। তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করেছে যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইরানের প্রস্তুতকৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি বড় অংশই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মাটির নিচে অবস্থিত, ফলে বিমান হামলাতেও এগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।
রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘তাঁরা (ইরান) যদি চুক্তি না করে তাহলে বোমা হামলা চালানো হবে। এমন বোমা হামলা চালানো হবে যেমনটা তাঁরা এর আগে কখনও দেখেনি।’
সামরিক হামলার পাশাপাশি ট্রাম্প ইরান থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন সাক্ষাৎকারে। ট্রাম্প বলেন, ইরানের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে কি-না তা নির্ভর করবে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের অবস্থানের ওপর। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুল্ক আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আমেরিকা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তিকে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। এই চুক্তি অনুযায়ী ইরান তাঁদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ চলাকালে আমেরিকা একতরফাভাবে জেসিপিওএ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পুরনো চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দেন। এ নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলো একাধিকবার আলোচনায় বসলেও তা আর ফলপ্রসূ হয়নি।
তবে ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তি থেকে বেরিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তিনি। এরপর জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে পুরোনো ওই চুক্তিতে ফেরার কথা বলেন তিনি। এ লক্ষ্যে বিশ্বশক্তিগুলো বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও তা সফল হয়নি।
তবে এবার ট্রাম্প বলেছেন যে, তাঁর সরকার ইরানের সাথ আলোচনার দ্বার খোলা রেখেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ইরানকে অবশ্যই পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ওয়াশিংটনের সাথে সরাসরি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে, ওমানের মধ্যস্থতায় আমেরিকার সাথে পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত থাকতে পারে।
আরএ/এসএন