ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ধর্ষণের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি

চলতি মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ধর্ষণ ও হত্যা। মার্চে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণচেষ্টাসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪২৮টি। আগের মাসে মোট নারী নির্যাতনের ঘটনার এ সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সোমবার (৩১ মার্চ) এমএসএফ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৫৭টি। মার্চে দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছিল ১৭টি, যেটি পরের মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছিল ১৯টি আর এ ধরনের ঘটনা মার্চে ঘটে ৬১টি।

মার্চে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে, তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েছে।

এমএসএফ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্চ মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ও পালানোর চেষ্টাকালে মৃত্যু এবং পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়ে চলছে, তেমনি বেড়েছে দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের আন্দোলনবিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কমলেও তা এখনো উদ্বেগজনক।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত-
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের নিজদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব অনেক বেড়েছে। বিএনপিরর দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫২টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির, তিনজন আওয়ামী লীগের, এক পথচারী, এক বৃদ্ধ ও এক প্রবাসী রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও বিএনপির দলীয় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে উল্লিখিত তিনজন নিহত হন।

সহিংসতার ৫২টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ৩৯টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ৬টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ৩টি, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ঐক্যজোটের সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি-এলডিপি সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি-জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষের ১টি, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের ১টি ঘটনা ঘটেছে।

পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন এবং আহত হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া এ মাসে দুজন রাজনৈতিক নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত একজন বিএনপির ও একজন আওয়ামী লীগের এবং লাশ উদ্ধার হওয়া দুজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

গণপিটুনি-
মার্চ মাসে অন্তত ৩৯টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৮ জন। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ৭ জন ডাকাত সন্দেহে, ২ জন সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জন রাজনৈতিক কারণে, ১ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জন অতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগে এবং ১ জনকে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপরদিকে ১৯ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ৪ জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৪ জন ডাকাতির অভিযোগে এবং সন্দেহজনক চুরি, ছিনতাই এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এমএসএফ প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আইনকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন বা গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটিয়ে গুরুতর আহত করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা এমদাদুল বহিষ্কার Jul 12, 2025
img
চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি Jul 12, 2025
img
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের সম্প্রচার স্বত্ব বেচাকেনায় চমক Jul 12, 2025
img
‘আমিষ ও প্রোটিন নিশ্চিত করা হলে কমবে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা’ Jul 12, 2025
img
‘বাঘি ৪’ সিনেমায় অ্যাকশনের রাজপুত্র হয়ে ফিরছেন টাইগার শ্রফ! Jul 12, 2025
img
পিএসজির সাফল্যে একক কৃতিত্ব দিচ্ছেন না কোচ Jul 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও সবাই চুপ থাকে: মনজিল মোরসেদ Jul 12, 2025
দেশের চলমান ইস্যু নিয়ে যা বললেন জাবি ছাত্রদল Jul 12, 2025
অটোরিকশা বন্ধ করে নিকুঞ্জবাসীর দৃষ্টান্ত স্থাপন! Jul 12, 2025
হাসিনার পাল্টা জবাব অনয়ের; যেভাবে আসলো সেই "কথায় কথায় বাংলা ছাড়" স্লোগান Jul 12, 2025
img
লিটনেই আস্থা প্রধান কোচের Jul 12, 2025
img
চলতি বছর ইইউতে প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা Jul 12, 2025
img
বিএনপির মহাসচিবের ভাইয়ের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর Jul 12, 2025
img
'রামায়ণ'-এ পরশুরামের ভূমিকাতেও দেখা যাবে রনবীরকে! Jul 12, 2025
img
ঢাকায় সোহাগ হত্যার দায় তারেক জিয়াকে গ্রহণ করতে হবে : ফয়জুল করীম Jul 12, 2025
img
চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদলের সাবেক নেতা ফাহিম বহিষ্কার Jul 12, 2025
img
বাজবল ছাড়তে ইংল্যান্ডকে বাধ্য করেছে ভারত : অশ্বিন Jul 12, 2025
img
শুটিং শুরু না হওয়ায় পেছাতে পারে ভিকি কৌশলের 'মহাবতার'! Jul 12, 2025
img
‘কাভালা’ গানের রেশ ধরে আবার রজনীকান্তের পাশে তামান্না! Jul 12, 2025
img
অপরাধীরা ক্ষমতার পরিবর্তনে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় বদলায়: জিল্লুর রহমান Jul 12, 2025