সুবর্ণচরে পানির দাবিতে দীর্ঘ পদযাত্রা

একসময় নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর ছিল পানির আধার, কিন্তু এখন সেখানে পানির তীব্র সংকট। অনিয়ন্ত্রিত ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুকিয়ে গেছে রবিশস্যের মাঠ-ঘাট, চরম দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ। সুপেয় পানির দাবিতে দল-মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন—“পানিই জীবন, পানিই প্রাণ, পানি বাঁচাতে হাত লাগান।” প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে উঠে এসেছে পানি সংরক্ষণ ও অপচয়রোধের আহ্বান, যেন সবাই এখনই সচেতন না হলে সামনে আরও বড় সংকট আসবে।

গতকাল বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানি সংকট নিরসনের আহ্বান নিয়ে স্থানীয় কিছু তরুণ পদযাত্রার আয়োজন করে। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান সর্বস্তরের মানুষ। চরবাটা খাসের হাট রাস্তার মাথা ও চরজব্বার ডিগ্রি কলেজ থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

পদযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা সুপেয় পানির তীব্র সংকট নিরসনে নানা দাবি তুলে ধরেন। এ সময় পরিবেশবান্ধব কৃষি, পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, রবিশস্যে প্রণোদনা বাড়ানো, খাল খনন, সরকারি খাস দিঘি উদ্ধার করে পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি কাজে লাগানোর উপর জোর দেওয়া হয়।

স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন চন্দ্রকলির নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশ কর্মী মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সুবর্ণচরে কখনই সুপেয় পানির সংকট ছিল না। এই জনপদকে বলা হতো পানির আধার। অথচ এখন পানির হাহাকার গ্রামে গ্রামে। এখন ১ হাজার ২০০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না। পানিতে লবণের পরিমাণ হঠাৎ বেড়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের পানি সংকট সমাধানে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভূগর্ভের পানির মজুতের পরিমাণ জরিপ করতে হবে। অন্যথায় পানির পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সুবর্ণচরে বড় বড় খাল ও নদী সেচের আওতায় আনা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সহকারী অধ্যাপক মাইন উদ্দিন ফিরোজ বলেন, রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করার বিষয়ে কৃষি আইন আছে। অথচ স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ আইন মানছে না। কৃষি কাজ, ইটভাটাসহ নানা কাজে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলায় এখন পানির কষ্টে ভুগছে সুবর্ণচরের মানুষ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সুবর্ণচরের চাষাবাদের জন্য ২৪৫টি গভীর নলকূপের (সেচপাম্প) অনুমোদন দিয়েছে। এর বাইরে তিন হাজারেরও বেশি অনুমদোনহীন সেচপাম্প আছে। গ্রামে গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় কমছে৷ ফলে গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে জল উঠছে না। তিনি বলেন, পানির ফুরিয়ে আসায় বিপদও বাড়ছে। পানি ও শস্য দুইই বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। মাটির নীচে পানি কমে গেলে আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু উপরে উঠে আসবে। এতে পানি শুধু দূষিত হবে না, জমির শস্যও বিষাক্ত হয়ে উঠবে।

বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের ওপর জোর দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তরিক উল্লাহ বলেন, চাষবাসে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব। চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। নইলে পানির অপচয় রোধ করা যাবে না।
সাংবাদিক কামাল উদ্দিন বলেন, পানির সংকট আগামী দিনে মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। পদযাত্রায় সহমত পোষণ করে যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ পা মিলিয়েছেন, তাতে আশা করি পানির অপচয় রোধ এবং সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন নাজির হাট কলেজের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সমাজকর্মী তালহা মুহাম্মদ সিফাত উল্লাহ, গবেষক মিজানুর রাকিব, সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, মোহাম্মদ হারুন, ছাত্র সংগঠক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে লেবাননে আবারও হামলা চালাল ইসরায়েল Nov 10, 2025
img

ভিডিও ভাইরাল

শেখ হাসিনাকে জিয়াউর রহমানের ‘স্ত্রী’ বলে বিতর্কে বিএনপি নেতা Nov 10, 2025
img
অক্টোবরে প্রায় ২০৭ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি Nov 10, 2025
img
আজ মেঘলা থাকবে ঢাকার আকাশ, কমতে পারে তাপমাত্রা Nov 10, 2025
img
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমি কেন ভয় পাব : জেলেনস্কি Nov 10, 2025
img
ক্যাটরিনার মাতৃত্ব নিয়ে সালমানের মন্তব্য ঘিরে বিভ্রান্তি Nov 10, 2025
img
নতুন নিয়মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি Nov 10, 2025
img
হাবিবুর রহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Nov 10, 2025
img
আজ দিনাজপুরে দুদকের ১৯০তম গণশুনানি Nov 10, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর দিল্লি, তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা Nov 10, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মেনে নেবে না: দুলু Nov 10, 2025
img
আমরা আজ কলি হয়ে আছি, একদিন ফুটবই : নাহিদ ইসলাম Nov 10, 2025
img
সোনাক্ষী সিনহার সম্পদের পরিমাণ কত? Nov 10, 2025
img
বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ৩ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ Nov 10, 2025
img
জিমের পরের যে ভুলে হতে পারে বড় বিপদ! Nov 10, 2025
img
টেকসই উন্নয়নে তারুণ্যের শক্তিকে মানবসম্পদে রূপ দিতে হবে : উপদেষ্টা আদিলুর Nov 10, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে আজ Nov 10, 2025
img
১০ নভেম্বর: ইতিহাসের এইদিনে আলোচিত যত ঘটনা Nov 10, 2025
img
সরে দাঁড়ালেন বিবিসির বার্তাপ্রধান ও মহাপরিচালক Nov 10, 2025
img
ডেটা নিরাপত্তায় দুই অধ্যাদেশ জারি করল সরকার Nov 10, 2025