স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ছে টাঙ্গাইলের শাল গজারী বন

টাঙ্গাইলের সখীপুরে সংরক্ষিত শাল গজারি ও উডলট বাগানে স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ছে নানা প্রজাতির লতাগুল্ম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প।

গত কয়েক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে এমন ক্ষতিকর ও ভয়ানক চিত্র। স্থানীয় বন বিভাগ মাইকিং করেও বনে অগ্নিসংযোগ থামাতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় সখীপুরের ৭২০ হেক্টর বনভূমিতে আমলকী, লটকন, হরীতকী, নিম, বহেড়া, গর্জন, চিকরাশি, গাদিলা, পিতরাজ, সোনালু, জলপাই, মহুয়া, কাঠবাদাম, গামার, শিমুল, ছাতিয়া, বেল, তেঁতুল, অর্জুনসহ ফলদ ও ঔষধি গাছের ৪২ প্রজাতির ১০ লাখ ৮০ হাজার চারা রোপণ করেছিল বন বিভাগ। তবে যেসব বনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, ওই অংশে প্রকল্পের চারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

এতে একদিকে বনের ভেতর বানর, বেজি, বাগডাশ, হনু বিড়াল, কাঠবিড়ালি, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী; চিল, শালিক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং গুইসাপ, শঙ্খচূড় বা রাজগোখরাসহ বিভিন্ন প্রজাতীর সরীসৃপ মারা পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিরাপদ বাসস্থান। বানরগুলো মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসছে।

সম্প্রতি সখীপুর বন বিভাগের দেওবাড়ি, কালমেঘা, বাজাইল বিট কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, তক্তারচালা, নলুয়া, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান ও মরিচা এলাকার কয়েকটি সংরক্ষিত বন ঘুরে আগুন দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার হতেয়া, বহেড়াতৈল ও বাঁশতৈল (অংশ) রেঞ্জের ১১টি বিটের অধীনে সখীপুরে ২৮ হাজার ৫৯৪.৫২ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২,২০০ একর জমিতে শাল গজারির সংরক্ষিত বন। বন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১,৭৮০ একর বনভূমিতে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ফলদ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাতাঝরার মৌসুম এলেই স্থানীয়রা বনে আগুন দেয়। ছোট গাছগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তা সংগ্রহ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করাই আগুন দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য।

দেওবাড়ি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন গজারি গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে, তখন ঝোপঝাড় পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বনের ভেতরে থাকা সব লতাপাতা পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রতিবছর বনে এভাবে আগুন দেওয়া হয়।”

এ বিষয়ে হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, “বনে আগুন দেওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। হুমকির মুখে পড়ে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আগুন দিয়ে লাকড়ি তৈরির চিরায়ত অভ্যাস বাদ দিতে হবে।”

এ ব্যাপারে বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমরান হাসান বলেন, “শুকনা মৌসুমে বনে আগুন দেওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে এ বছর সুফল পেতে বাগানের ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রক্ষায় বিভিন্ন এলাকায় পাহারাদারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভূমিকম্পের মেইন শক এখনো আসেনি! Nov 22, 2025
img
ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স Nov 22, 2025
img
জাপার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে: নাহিদ ইসলাম Nov 22, 2025
img
জামায়াতের বিজয় চাই না, জনগণের বিজয় চাই : আমির Nov 22, 2025
img
ফ্যাসিবাদ অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা ইতিহাস গড়েছে : শিক্ষা উপদেষ্টা Nov 22, 2025
img
অ্যাশেজে ১২৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিলেন ট্রাভিস হেড Nov 22, 2025
img
সতর্ক না হলে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে : রাজউক চেয়ারম্যান Nov 22, 2025
img
জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ৪টি প্রস্তাব নরেন্দ্র মোদির Nov 22, 2025
img
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে নারী শিশুসহ আটক ১৩ Nov 22, 2025
img
খালেদা জিয়ার আপসহীনতার কারণেই দেশে বারবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে : জুয়েল Nov 22, 2025
img
নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে : রুমিন ফারহানা Nov 22, 2025
img
ভূমিকম্প আমাদের অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে আসে : আজহারী Nov 22, 2025
img
গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ধানের শীষের বিকল্প নেই : দুলু Nov 22, 2025
img
দেশি উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন টেলিকম নীতি প্রণয়নের আহ্বান Nov 22, 2025
img
বিগত দিনের মতো যদি কেউ কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে, তবে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে : জামায়াত আমির Nov 22, 2025
img
বিএনপিতে হোন্ডা-গুন্ডার রাজনীতি থাকবে না: এ্যানি Nov 22, 2025
img
ভূমিকম্প নিয়ে ১০টি বিস্ময়কর তথ্য Nov 22, 2025
শান্তি প্রস্তাব মানতে ইউক্রেনকে সময় বেধে দিলো ট্রাম্প Nov 22, 2025
গণভোটের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মানুষ বুঝতে পারছে না : মির্জা ফখরুল Nov 22, 2025
“শিবির সম্পর্কে ভুল ধারণা ভাঙল অনুষ্ঠানে এসে ” Nov 22, 2025