লোহিত সাগরে হুথির তাণ্ডবে ভয়ানক বিপদে আমেরিকা!

লোহিত সাগর এখন এক যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। একের পর এক বিস্ফোরণ, আকাশে ওড়া ড্রোন এবং সমুদ্রে গর্জনরত যুদ্ধজাহাজের কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইয়েমেনের হুথি বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সরাসরি সংঘাত বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার গভীর রাতে ইয়েমেন সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারী এক বিবৃতিতে জানান, লোহিত সাগরে অবস্থানরত মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান লক্ষ্য করে একযোগে ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন হামলা** চালানো হয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এটি ছিল হুথিদের তৃতীয় হামলা।

হুথিরা জানিয়েছে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনের জবাব এবং গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ।

অন্যদিকে, হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের রাজধানী সানা, সাদা ও হুদায়দায় একের পর এক বিমান হামলা চালায়। ইয়েমেনের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় অন্তত তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ওয়াশিংটনের সামরিক পদক্ষেপ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় হুথিদের পাল্টা জবাবও হয়ে উঠেছে আগ্রাসী ও বিস্ফোরক।

হুথিদের রাজনৈতিক শাখা আনসারুল্লাহ আন্দোলন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যতদিন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ প্রত্যাহার না করা হবে এবং ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না হবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি স্বার্থে হামলা অব্যাহত থাকবে। হুথিরা এটিকে শুধুই প্রতিরোধ নয়, বরং ন্যায্য যুদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে।

মার্কিন প্রতিক্রিয়াও দ্রুত এসেছে। রবিবার ও সোমবার সানায় ১৩টি বিমান হামলা চালানো হয়, যার বেশিরভাগই বেসামরিক ভবনের ওপর। আলমালিকা ও সারফ এলাকায় চালানো হামলা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরই মধ্যে ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ১৬টি মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করল হুথিরা। প্রতিটি ড্রোনের মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

এই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যু। হুথি বাহিনী একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তারা লোহিত সাগর ও আরব সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ চলাচলও বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, যার ইতোমধ্যেই এলাথ বন্দরে বড় প্রভাব পড়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইয়েমেন এখন আর এক দুর্বল রাষ্ট্র নয়। বরং তারা এক সুসংগঠিত প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মহলে হুথিদের সামরিক সক্ষমতা এখন অন্যতম আলোচনার বিষয়। তাদের কাছে এখন উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল এবং শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

হুথিদের অস্ত্রভাণ্ডারে সামাদ সিরিজের ড্রোন, বদর ও কায়েম সিরিজের মিসাইল এবং আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহারের কৌশল রয়েছে। এসব শক্তির সমন্বয়ে তারা লোহিত সাগরে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ বলয়ে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতির মোড় কোন দিকে গড়াবে, তা এখনো অনিশ্চিত, তবে স্পষ্টতই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়তে চলেছে।


এসএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজধানীর ডেমরা থেকে ফেনীর ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেফতার Jul 05, 2025
img
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতার দাবি Jul 05, 2025
রংপুরে জামায়াতের জনসভা মঞ্চে শহীদ আবু সাঈদের বাবা-ভাই Jul 05, 2025
একক মাতৃত্ব ও কো-প্যারেন্টিং নিয়ে যা বললেন মিথিলা Jul 05, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 05, 2025
৩ আগস্ট শহীদ মিনারে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা এনসিপির Jul 05, 2025
img
জুলাইয়ের যুদ্ধ চালিয়ে যাব পার্লামেন্ট পর্যন্ত: সামান্তা শারমিন Jul 05, 2025
img
‘দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, বিএনপি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ Jul 05, 2025
img
বয়স বাড়লে হৃদ্‌যন্ত্রের যত্নে নিয়মিত খেতে হবে সবুজ শাকসবজি Jul 05, 2025
img
৮ ঘণ্টার ঘুম কি আদৌ জরুরি? জেনে নিন Jul 05, 2025
img
আল্লু অর্জুন ও অ্যাটলির অ্যাকশন ছবিতে অভিনেত্রী ম্রুনাল ঠাকুরের ঝলক! Jul 05, 2025
img
রাজপথ এনসিপি ও ছাত্র-জনতার দখলে থাকবে: সামান্তা শারমিন Jul 05, 2025
img
টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় প্রাণ গেল অন্তত ১৩ জনের Jul 05, 2025
img
‘আরও ভাল হওয়ার জায়গা আছে’, আমিরকে সরাসরি সমালোচনা নতুন প্রেমিকা গৌরীর! Jul 05, 2025
img
'জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে' Jul 05, 2025
img
'বিএনপিতে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের স্থান নেই' Jul 05, 2025
img
হাইকোর্টে খারিজ সাইফের আবেদন, ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি চলে যাবে সরকারের দখলে! Jul 05, 2025
img
সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প বলল ‘মেট্রো ইন দিনো’ সিনেমা, দেখে নিন রিভিউ Jul 05, 2025
img
বিচ্ছেদ জল্পনার মাঝেই সোহেলের মায়ের জন্মদিন উদযাপনে অভিনেত্রী তিয়াসা! Jul 05, 2025
img
যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান Jul 05, 2025