ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক প্রয়োজন ছিল : মির্জা আব্বাস

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক প্রয়োজন ছিল মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। একই সঙ্গে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
 
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই বৈঠকটা নিশ্চয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটার প্রয়োজন আছে এবং প্রয়োজন ছিল। এই বৈঠকের জন্য আমাদের সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চেষ্টা করছিলেন। এই সময়ে একটা বৈঠক হওয়ার দরকার ছিল, তারা তা করেছেন। তবে আমি জানি না বৈঠকের অভ্যন্তরে কি আলোচনা হয়েছে। বিশদ না জানলে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
 
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন এবং এই বিচার সময়ের দাবি, জনগণের দাবি, আমাদের দাবি। যদি শুধুমাত্র শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কথাবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে আমি একটু যোগ করতে চাইবো, উনার (শেখ হাসিনা) যেসব সাঙ্গ-পাঙ্গ আছে সেখানে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদেরও যেন সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে পাঠিয়ে দেয়া। যাতে তার বিচারটা হয়। কারণ একটা ফ্যাসিস্টের বিচার হওয়া খুব জরুরি। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না সারা বিশ্বের জন্য এটা খুব জরুরি। কোনো ফ্যাসিস্ট কখনো বিনা বিচারে যেতে পারে না।
 
তিনি বলেন, বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে। তিস্তা বাঁধ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নাই। তিস্তার পানি আমাদের দিতে হবে এবং তিস্তা বাঁধের প্রয়োজনীয় সংস্কার, আমাদের করতে হবে। তিস্তা ও ফারাক্কার বিষয়ে নিয়ে বাংলাদেশ কোনো ছাড় দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ একটা শক্ত অবস্থানে আছে। ভারতের সাথে যেসব অসম চুক্তি বিগত সরকারের আমলে হয়েছে এখন সেসব চুক্তি বাতিল করা দরকার। যেসব অসম চুক্তি কার্যকর হয় নাই সেগুলো বাতিল করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। এক গ্রুপ আছে দেশে, আরেক গ্রুপ আছে বিদেশে। যারা নাকি নির্বাচনকে বাদ দিয়ে সংস্কারের কথা বলছেন। আবার বলার চেষ্টা করছেন সংস্কারের কথা শুনলে নাকি বিএনপির মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমার এখানে তীব্র আপত্তি। বিএনপি কখনো সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বিএনপি বরাবর সংস্কারের পক্ষে, একই সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনেরও পক্ষে। দুইটারই প্রয়োজন আছে। কিন্তু এমন সংস্কারের পক্ষে বিএনপি নয় যেটি দেশের জনগণের স্বার্থে, জনগণের অধিকারের বাইরে চলে যাবে।

অনলাইনে কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, গতকাল দেখলাম এক ভদ্রলোক দরবেশ সালমান এফ রহমানের টাকা খেয়ে মোটা হয়েছেন, স্বাস্থ্য ভালো করেছেন, চেহারা সুন্দর করেছেন। তিনি লম্বা লম্বা কথা বলেন, দেশের বাইরে থেকে। খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, উনি গতকাল আমার সম্পর্কে খুব বাজে কথা বলেছেন। তো বলতে থাকুক।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি ঢাকার মানুষ। আমার বাবা-মা ওদের মতো গালি দেওয়া শেখায়নি। ওরা আসলে মানুষ নয়, অন্য জাতি। যারা দরবেশের টাকা খেয়ে শরীর স্বাস্থ্য ভালো করে, এ দেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে কুৎসা রটনা করে, গালিগালাজ করে, তাদের দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

তারা আমার সম্পর্কে, আমার দলের সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার পরিবার সম্পর্কে বাজে খারাপ ভাষায় কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। অপেক্ষা করুন,ওরা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবকেও ধরবে। ওরা চাচ্ছে কি? ওরা বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কাউকে ভালোবাসে না, ওরা ভালোবাসে ভারতকে।ওরা চায় এ দেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তার করতে।

তিনি বলেন, ভারতের কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে বসাতে পারে, ওই সমস্ত লোকজনদের জন্য ওরা কাজ করছে। এই গ্রুপটি, এই শুকুরের গোষ্ঠী কখনো বাংলাদেশে কোনো সরকারকে স্থিতিশীল থাকতে দেবে না। আমি আজকে হলফ করে বলছি, এই গোষ্ঠী দেশকে স্থিতিশীল থাকতে দেবে না। কখনো আমার বিরুদ্ধে, কখনো অমুকের বিরুদ্ধে লেগেই থাকবে। ওরা ইউটিউবে পয়সা কামাচ্ছে এসব মিথ্যাচার, কুৎসা রটনা করে। ওরা যে ভাষায় কথা বলছে, আমি আর বললাম না। আমি বন্দে আলী মিয়ার কবিতাটাই বলতে চাই, কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়ে, তাই বলে কি কুকুরকে কামড় দেওয়া মানুষের শোভা পায়?



এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
গোয়েন্দা সিরিজ নির্মাণে ফিরছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ Jul 05, 2025
img
৫ আগস্টের পর পালিয়ে থাকা আইন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 05, 2025
img
খুব শিগগিরই চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে : খাদ্য উপদেষ্টা Jul 05, 2025
img
'স্পিরিট' থেকে দীপিকাকে সরিয়ে বিপাকে ভাঙ্গা? বিতর্কিত সিনেমার শুটিং নিয়ে যা জানালেন পরিচালক Jul 05, 2025
img
বিমানবন্দরে হজফেরত আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার Jul 05, 2025
img
‘২০’ ও ‘৩০’ নম্বর স্মারক হাতে জোতার শেষ শ্রদ্ধায় লিভারপুল খেলোয়াড়রা Jul 05, 2025
img
১২ দেশের জন্য শুল্কের চিঠিতে সই করেছি: ট্রাম্প Jul 05, 2025
img
লটারি করে হজযাত্রী নির্বাচন করবে কুয়েত Jul 05, 2025
img
মালয়েশিয়ার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা তদন্তে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ Jul 05, 2025
img
বায়ুদূষণ নিয়ে লেকচার, এবার নিজেই বাজি ফোটালেন প্রিয়াঙ্কা Jul 05, 2025
img
আওয়ামী লীগ দেশে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি: মঈন খান Jul 05, 2025
img
১৫ বছরের সাংবাদিকতা নিয়ে তদন্ত হবে : প্রেসসচিব Jul 05, 2025
img
মান্নাকে বাংলাদেশের ‘জেমস বন্ড’ মনে করতেন জাহিদ হাসান! Jul 05, 2025
img
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেব না, ঘোষণা চীনের Jul 05, 2025
img
'রামায়ণ' সিনেমায় শূর্পনখার চরিত্রে দেখা যাবে রাকুল প্রীতকে Jul 05, 2025
মালয়েশিয়া ফেরত ৩ বাংলাদেশির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে- আসিফ নজরুল Jul 05, 2025
img
২য় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ Jul 05, 2025
img
এই ফল আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না, ব্রাজিলিয়ান তারকা এস্তেভো Jul 05, 2025
img
সঞ্জয়ের ৩০ হাজার কোটি মূল্যের কোম্পানির দায়িত্ব পেলেন জেফ্রি মার্ক ওভারলি Jul 05, 2025
img
এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কার আলোচনার বাইরে : নজরুল ইসলাম Jul 05, 2025