মুম্বাই থেকে দু’ঘণ্টায় দুবাই পৌঁছে দেবে সাবমেরিন ট্রেন!

সময় কমতে চলেছে মুম্বই থেকে দুবাই যাতায়াতের। আকাশপথে মুম্বই থেকে দুবাই যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। সেই সময়ের থেকে আরও এক ঘণ্টা কম লাগবে আর কয়েক বছরের মধ্যে। ভারত থেকে দুবাই যেতে লাগবে মাত্র দু’ঘণ্টা! তাও আবার সমুদ্রপথে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি।

ভারত ও দুবাইয়ের মধ্যে এমন একটি চুক্তি প্রস্তাবিত হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে দুবাই ভ্রমণ করা সম্ভব হবে রেলপথের মাধ্যমে। সমুদ্রের নীচ দিয়ে প্রস্তাবিত রেলপথটি তৈরি হলে ভারত থেকে দুবাইয়ের মধ্যে যাতায়াত আরও সহজসাধ্য হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। যাঁদের প্রায়শই দুবাই যাতায়াত করতে হয় তাঁদের কাছে এই সংবাদ অত্যন্ত সুখকর।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মুম্বই থেকে দুবাই পর্যন্ত জলের তলা দিয়ে ছুটবে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেনটি। গতি হবে ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার থেকে হাজার কিলোমিটার। ফলে দুই শহরের মধ্যে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ উন্নত হবে। যদিও বছর কয়েক আগে এই প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে এর অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি।

প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ২০৩০ সালের মধ্যেই সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ছুটবে সাধারণ বুলেট ট্রেনের চেয়েও দ্বিগুণ গতিবেগসম্পন্ন এই বিশেষ ট্রেনটি। এর ফলে দুই দেশের দু’টি শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই রেলপথের ফলে জুড়ে যাবে বাণিজ্যনগরী মুম্বই ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই।

মুম্বই থেকে দুবাইয়ের ফুজাইরাহ পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা চলছে এই ট্রেনের। দ্রুতগতির এই ট্রেনের কথা প্রথম উঠে আসে ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-ভারত কনক্লেভে। আমিরশাহির তৎকালীন জাতীয় উপদেষ্টা কমিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছিলেন এই ট্রেনের ভাবনার কথা।

সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে প্রথমেই সমীক্ষা করে দেখতে হবে এই ধরনের কোনও রেললাইন পাতা যাবে কি না। দূরত্বটাও মাথায় রাখতে হবে। ৬০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় জলস্তরের ভারসাম্য বজায় রেখে এই ট্রেনে পরিষেবা চালু করার জন্য চাই উচ্চ প্রযুক্তির কারিগরি দক্ষতাও।

ম্যাগনেটিক ফ্লোটিং ট্রেন (মাগলেভ) রেললাইন ও ইঞ্জিনের মধ্যে কোনও ঘর্ষণ থাকবে না। ম্যাগনেটিক রিপালশন সিস্টেম বেস্‌ড সুইফ্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন (চৌম্বকীয় বিকর্ষণ সম্পন্ন) পদ্ধতিতে চলবে এই ট্রেন। দুই জোড়া চুম্বক ঠেলে এগিয়ে দেবে ট্রেনটিকে। ফলে যাত্রা হবে আরামদায়ক ও দ্রুত।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ন্যাশনাল অ্যাডভাইজ়ার ব্যুরো লিমিটেডের পরিকল্পনা অনুসারে দু’হাজার কিলোমিটারে পথ অতিক্রম করা যাবে এই রেলপথের মাধ্যমে। সমুদ্রের তলদেশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে রোমা়ঞ্চকর ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারবেন যাত্রীরা। এক অনন্য অভিজ্ঞতা সাক্ষী হতে পারবেন যাত্রীরা।

ভারত ও আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ন্যাশনাল অ্যাডভাইজ়ার ব্যুরো এই প্রকল্পের প্রস্তাব করে বেশ কয়েক বছর আগে। বুলেট ট্রেনটি চালু হলে দু’দেশের নাগরিকের যাতায়াতের যেমন সুবিধা বাড়বে, তেমনই আরব ও ভারতের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও লক্ষ্মীলাভ হবে।

সম্প্রতি ন্যাশনাল অ্যাডভাইজ়ার ব্যুরো লিমিটেডের প্রতিনিধি বলে দাবি করা একটি সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্টের তরফে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। রেলপথটি তৈরি হওয়ার পর তা কেমন দেখতে লাগবে তারই কাল্পনিক দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে ভিডিয়োটিতে। বিশেষ প্রযুক্তির এই উচ্চগতির ট্রেন ও রেলপথের জন্য প্রয়োজন কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ।

চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ তেল আমদানি করে ভারত। হরমুজ প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে অপরিশোধিত তেল বয়ে আনে দেশীয় তেল সংস্থাগুলি। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ তেল আমদানি-রফতানি হয়। ভারতে সৌদি আরব দিনে ৬৩ লক্ষ ব্যারেল তেল রফতানি করে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, কাতার, ইরাক করে ৩৩ লক্ষ ব্যারেল। ইরান পাঠায় ১৩ লক্ষ ব্যারেল।

এই রেলপথ চালু হলে নয়া যাত্রাপথে কম সময়ে তেল এসে পৌঁছবে ভারতে। সহজতর হয়ে উঠবে সেই যাত্রা। এই বিপুল গতিসম্পন্ন ট্রেনটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দৃঢ় করবে এমনটাই আশা করছে দু’দেশের বাণিজ্যিক মহলের কর্তারা।

ট্রেনগুলিতে যাত্রী পরিবহণ ছাড়াও জল, তেল বিনিময় হবে এই পথে। ফুজাইরাহ থেকে তেল আসবে মুম্বই বিমানবন্দরে আর নর্মদা নদীর জল যাবে ওই দেশে। রেলপথে যুক্ত করা গেলে সেখান থেকে আরও সস্তায়, সহজে ও দ্রুত অপরিশোধিত তেল ভারতে আনা ও জল পাঠানো যেতে পারে।

এটি চালু হলে ভারতের ক্ষেত্রে এটি হবে প্রথম সমুদ্র রেলপথ। বিদেশে এই ধরনের পরিষেবা ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে। জাপান, কোরিয়া, কানাডায় রয়েছে এই ধরনের ব্যবস্থা। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইজ়রায়েল, ব্রিটেনও চেষ্টা করছে এই রেলপথকে তাদের দেশে চালু করার।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন Jul 01, 2025
img
জুলাই সনদ ঘোষণা না করলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ইনকিলাব মঞ্চের Jul 01, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত Jul 01, 2025
img
এনবিআরের পাঁচ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক Jul 01, 2025
img
লস অ‍্যাঞ্জেলেস মাতালেন জেমস Jul 01, 2025
img
তারা আমাদের মহাভারতে বিলীন করার প্রকল্পকে রুখে দেবে : পিনাকী Jul 01, 2025
img
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দির সাজা মওকুফের আদেশ Jul 01, 2025
img
এক ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 01, 2025
img
পৃথিবীর অন্য কোনো শহরকে কলকাতার মতো মনে হয় না: জয়া Jul 01, 2025
img
রাতের ভোটের দায় স্বীকার করে আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দী Jul 01, 2025
img
সব মামলার অবসান ঘটিয়ে এক হলেন হিরো আলম-রিয়ামনি Jul 01, 2025
শাকিবকে ‘মেগাস্টার’ বলা নিয়ে আপত্তি জাহিদ হাসানের Jul 01, 2025
বিপিএলে দল নিতে আবেদন করেছে নোয়াখালী Jul 01, 2025
আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আপত্তি ভারতের, সিরিজ পেছাতে চায় বিসিসিআই Jul 01, 2025
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজন সম্ভব? দল গঠনে আসছে বড় পরিবর্তন! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার তৃতীয় দিনে অনুপস্থিত ২৪৮৬৪, বহিষ্কার ৬২ Jul 01, 2025
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ারাই পাবেন কোটা সুবিধা! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতা আটক Jul 01, 2025
তাপপ্রবাহে জ্বলছে ইউরোপ, ফ্রান্সে রেড অ্যালার্ট জারি Jul 01, 2025
ড. ইউনূস শহীদদের প্রকৃতভাবে মূল্যয়ন করছেন না! Jul 01, 2025