মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে উধাও ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, বাড়ছে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা

দুই দিনে মার্কিন শেয়ার বাজার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

নাসডাক সূচকের বড় পতনের মধ্যে দিয়ে গত কয়েক দশকের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সপ্তাহের সমাপ্তি ঘটল। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শুক্রবার (৪ মার্চ) চীন ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসাবে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছেছে।

দিনের শুরুতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুদের হার কমানোর জন্য ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর চাপ তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এতে বিনিয়োগকারীদের আশা জেগেছিল, পাওয়েল সুদের হার কমাতে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে বাজারকে কিছুটা স্বস্তি দেবেন। কিন্তু সেই আশা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়, কারণ পাওয়েল শুধু প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে 'বর্ধিত ঝুঁকির' কথা উল্লেখ করলেও সুদের হার কমানোর ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেননি।

পাওয়েলের এই অবস্থান ওয়াল স্ট্রিটে আরও হতাশা ডেকে আনে। মাত্র দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের মূল্যমান ৬ শতাংশ কমেছে, শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়েছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। মন্দার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে এবং মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। যদিও শুক্রবার ট্রেজারি বন্ড দুটি পরিস্থিতির মধ্যে আটকে থাকতে পারে, সুদের হার নিয়ে ব্যবসা করা বিনিয়োগকারীরা কোথায় টাকা বিনিয়োগ করছেন সেটি স্পষ্ট। এই বছর চারটি সুদের হার কমানোর বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নির্ধারিত এবং তা জুনে শুরু হবে।
শেয়ারবাজারে বড় ধস, আত্মবিশ্বাসের পতন এবং অতি অনিশ্চিত পরিস্থিতি দেখে ফেড যদি ৬-৭ মে বৈঠকে সুদের হার কমায়, তা খুব একটা চমকপ্রদ হবে না। আসলে, যদি বাজারের এই পতন পরবর্তী সপ্তাহেও চলতে থাকে তাহলে বৈঠক ছাড়াও পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

এটি ২০২০ সালের মহামারী পরবর্তী সময়ে শেয়ারের সবচেয়ে বড় পতন। তবে, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মতো নয়। বর্তমানে ওয়াল স্ট্রিটে যে অস্থিরতা চলছে সেটি এক সরকারী নীতির ফল। এবং তারা জানত, এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এমন কিছু আগে কখনো দেখা যায়নি। গত সপ্তাহের অর্থনৈতিক ও বাজারের পরিসংখ্যান অনেক বিনিয়োগকারীদের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি বহু বছরের মার্কিন ইতিহাসে অনেক কিছুই নতুন করে ঘটেছে যেমন, ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মার্কিন শুল্ক আরোপ।

জেপি মর্গান বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৬৮ সালের পর সবচেয়ে বড় মার্কিন কর বৃদ্ধি এবং এর প্রভাবে একটি বৈশ্বিক মন্দার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

দুই দিনে মার্কিন শেয়ার বাজার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
বারক্লেইস-এর অর্থনীতিবিদরা এখন বলছেন, এই বছর মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে এবং চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি সংকুচিত হবে, যা 'মন্দার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।'

বাকি বিশ্বও এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে না। সিটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বছর ইউরোজোনের প্রবৃদ্ধিতে এক শতাংশের মতো ঘাটতি থাকবে, যা ওই অঞ্চলকে মন্দার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। আর চীনও একই ধরনের ধাক্কা খাবে যেহেতু তাদের জিডিপি বৃদ্ধি আগে থেকেই ৫ শতাংশের নিচে ছিল।

বিশ্বব্যাপী চাহিদা দ্রুত কমতে শুরু করায় শুক্রবার তেলের দাম দ্বিতীয় দিনের মতো ৬ শতাংশ পড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার এর প্রতি ব্যারেলের মূল্য ৬২ ডলারে পৌঁছেছে। এটি ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং গত বছর থেকে ২৬ শতাংশ কম।

এবং সবশেষে, শুক্রবার কিছু মুহূর্তের জন্য সুইস সরকারের দুই বছরের বন্ডের সুদ হার শূন্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। অবশ্য এটা সুইজারল্যান্ড, যেখানে সরকারি সুদের হার মাত্র ০.২৫ শতাংশ। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের স্পষ্ট প্রমাণ এটি।

বাজার সপ্তাহের শেষে বন্ধ থাকবে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী মহলের মধ্যে যোগাযোগ চালু থাকবে, কারণ বিভিন্ন দেশের সরকার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ কমানোর চেষ্টা করবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা তাদের নীতির প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাববেন। সোমবার বাজার আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫৬ বন্দির সাজা মওকুফের আদেশ Jul 01, 2025
img
এক ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 01, 2025
img
পৃথিবীর অন্য কোনো শহরকে কলকাতার মতো মনে হয় না: জয়া Jul 01, 2025
img
রাতের ভোটের দায় স্বীকার করে আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দী Jul 01, 2025
img
সব মামলার অবসান ঘটিয়ে এক হলেন হিরো আলম-রিয়ামনি Jul 01, 2025
শাকিবকে ‘মেগাস্টার’ বলা নিয়ে আপত্তি জাহিদ হাসানের Jul 01, 2025
বিপিএলে দল নিতে আবেদন করেছে নোয়াখালী Jul 01, 2025
আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আপত্তি ভারতের, সিরিজ পেছাতে চায় বিসিসিআই Jul 01, 2025
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজন সম্ভব? দল গঠনে আসছে বড় পরিবর্তন! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার তৃতীয় দিনে অনুপস্থিত ২৪৮৬৪, বহিষ্কার ৬২ Jul 01, 2025
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ারাই পাবেন কোটা সুবিধা! Jul 01, 2025
img
এইচএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতা আটক Jul 01, 2025
তাপপ্রবাহে জ্বলছে ইউরোপ, ফ্রান্সে রেড অ্যালার্ট জারি Jul 01, 2025
ড. ইউনূস শহীদদের প্রকৃতভাবে মূল্যয়ন করছেন না! Jul 01, 2025
img
যেসব ইস্যুতে ঐকমত্য, সেসবেই সংস্কার হবে : মান্না Jul 01, 2025
রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনা স্টাইলে সংস্কারে বা'ধা দিচ্ছে! Jul 01, 2025
এনসিপি নেতা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা! Jul 01, 2025
জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালা নিয়ে যা জানাচ্ছেন উপদেষ্টা ফারুকী Jul 01, 2025
img
কঙ্গনাকে ছাড়িয়ে গেলেন কাজল Jul 01, 2025
img
নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন নুরুল হুদা Jul 01, 2025