বড় রকমের সংস্কার করতে চাই, দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বড় রকমের সংস্কার করতে চাই। দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই। এখানে অনেক সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।’ সম্প্রতি চীন সফরের সময় বেইজিংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)- এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

প্রশ্নকর্তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চীন সফর করার ফলে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পুরোনো বন্ধু-বান্ধব যারা আছেন, তাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমাদের বহু কাজ একসঙ্গে হচ্ছে, যেমন— আমার বন্ধু প্রফেসর ড্যু বহুদিন থেকে এগুলো থেকে (গ্রামীণ ব্যাংক) উত্সাহ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান চায়নিজ একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সেস ওনার পরিচালনায় চলে। তিনি খুবই আগ্রহী হলেন এটা জানতে। বাংলাদেশে এলেন এটা বোঝার জন্য। এরপর সারা চীনের বিভিন্ন জায়গায় তার এ কর্মসূচি প্রচার করেছেন। তার মাধ্যমে মাইক্রোক্রেডিট অ্যাসোসিয়েশন অব চায়না—এরকম একটা বড় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। অনেকে এটার অনুকরণ করেছে, যার ফলে অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হয়েছে। তারা বার্ষিক সম্মেলন করে, নানা উত্সব করে। এগুলো আবার মনে পড়ে গেল ওনাকে দেখে।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আরো বন্ধু-বান্ধব যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে দেখা হলো এ উপলক্ষ্যে। এই পরিবর্তনটা তার নজরে পড়েছে। আগে ছিলাম নিজের কাজ নিয়ে, এখন আবার কি সরকারের মধ্যে কি বিপদে পড়লাম তা বুঝতে চাচ্ছেন তারা। কী হবে? কেমন হবে? তবে সর্বাত্মকভাবে যেটা হলো—ভীষণ রকমের একটা সমর্থন পেলাম সবার কাছ থেকে। বিশেষ করে চীন সরকারের পক্ষ থেকে। তাদের সমর্থন একবারে সীমাহীন সমর্থন। কাজেই এটা আমাদেরকে একটা আনন্দ দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে চীনের সমর্থন পাওয়া, সহযোগিতা পাওয়া খুবই দরকারি। কারণ আমরা বড় রকমের সংস্কার করতে চাই। দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন চিন্তাভাবনার কাঠামো ব্যবহার করে একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকর্তা তাকে জিগ্যেস করেন, ‘আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে আমি আপনার তিন শূন্য তত্ত্ব কিছুটা পড়েছি। এখন আমি আপনার কাছে জানতে চাই—এ প্রস্তাবে তিন শূন্য তত্ত্ব এবং শি জিন পিংয়ের প্রস্তাবিত আধুনিকীকরণ তত্ত্বের মধ্যে কোনো মিল আছে কি না?’

জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অনেক সামঞ্জস্য আছে। বিষয়গুলো তো একই, তবে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু একই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছানোর চেষ্টা করছি; অর্থাত্, আমাদের লক্ষ্য এটাই যে, একটা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে হবে। এই পুরোনো পৃথিবী যতই আমরা টেনে-হিঁচড়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি না কেন, আমাদের পরিশ্রম এতে সার্থক হচ্ছে না। কাজেই মেরামতি কাজে না গিয়ে সুন্দর করে আবার কাঠামোটি গড়ে তুলতে হবে, এক্ষেত্রে চিন্তার কাঠামো গড়াই ছিল তিন শূন্যের মূলকথা। পরিষ্কারভাবে বলা আমরা কী চাই।’ এ সময় প্রশ্নকর্তা বলেন, ‘এই তত্ত্ব বাস্তবায়িত হলে আমাদের পৃথিবী অনেক সুন্দর হবে।’

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী সুন্দর হবে না কিন্তু বেঁচে যাবে। বর্তমান যে পৃথিবী, যে সভ্যতা কাঠামোতে আমরা আছি, এই কাঠামোতে পৃথিবীর বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এটা আত্মহননকারী একটা সভ্যতা। কাজেই আত্মহনন থেকে রক্ষা করে একটি সুন্দর সভ্যতার দিকে নিয়ে যেতে হলে বিশ্বকে প্রথমে এই অবস্থা থেকে সরিয়ে আনতে হবে।’
প্রশ্নকর্তা বলেন, ‘এ বছর চীন সফরে এসে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে চীনা দর্শক এবং অন্যান্য দেশের অতিথিদের কাছে কেমন সাড়া পেয়েছেন?’ জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘খুবই ভালো, আমি যেগুলো বলতে চেয়েছি, তাদের মনে দাগ কেটেছে বলে মনে হয়। কারণ উচ্চতর স্থানে আসীন এমন ব্যক্তি, উপপ্রধানমন্ত্রী অনেক প্রশংসা করলেন। বিশেষ করে তিন শূন্যের কথাটা বললাম। আমি মনে করেছিলাম, এগুলো বোধহয় উনি বুঝতে পারবেন না। কিন্তু উনি এসে বললেন, ওনার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে তরুণদের মনের মধ্যে যে এটা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছ, এটা আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি চিন্তা করে দেখব, কীভাবে এটাকে নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বক্তৃতা দেওয়ার পর অনেকেই কথা বলতে এসেছিল। আমার পাশে যিনি বসেছিলেন, তিনি উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করলেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যে মানুষের মনে দাগ কাটতে পেরেছি, এটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।’

এ সময় প্রশ্নকর্তা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে জানতে চান—‘চীনের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে আলাপ-আলোচনা কেমন হয়েছে?’

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘খুবই ভালো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি মনে করতে পেরেছেন যে, তার সঙ্গে আমার ২০০৯ সালে দেখা হয়েছিল। তখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমি তারই আহ্বানে তার অফিসে সাক্ষাৎ করেছিলাম। সেখানে আমাদের মধ্যে মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেটার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। আলোচনা তার মনে দাগ কেটেছিল, তিনি সেটাও বললেন। উনি ফুজিয়ান প্রভিন্সের একজন গভর্নর ছিলেন। সেসময় তার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তিনি সেসবের কথাও আমাকে বলেছেন এবং এই মাইক্রোক্রেডিটের চিন্তা তার খুব মনে ধরেছে, সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন। গভর্নর হিসেবে তার অভিজ্ঞতা, দারিদ্র্য মোচনে কী কী উপায় হতে পারে এবং তার মধ্যে এটাও (ক্ষুদ্রঋণ) একটি উপায় হিসেবে তিনি গ্রহণ করেছিলেন, সেজন্য সেটা তার খুব মনে ধরেছে বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন। আমাদের আলোচনা খুবই সুন্দর হয়েছে। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা কী কী করতে পারি, সেটা তার কাছে আমরা তুলে ধরেছি, এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন লাগবে। তিনি সমর্থন দিতে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আপনাদের যা লাগে, আমরা সেটা চেষ্টা করব আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নোংরা মানসিকতার উত্তর দেব কেন: মানসী সেনগুপ্ত Dec 02, 2025
img
১০ ফেব্রুয়ারি ভোটের ইঙ্গিত দিল ইসি Dec 02, 2025
আমরা চাইলে খেলা হবে, বোর্ড চাইলে খেলা হবে না Dec 02, 2025
img
বেগম জিয়াকে নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যেও আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি: রিজভী Dec 02, 2025
img
ফের ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়? Dec 02, 2025
দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের শক্তির উৎস: তারেক রহমান Dec 02, 2025
মাদুরোকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম, উত্তেজনা বাড়ল ওয়াশিংটন-কারাকাসে Dec 02, 2025
img
পাকিস্তান সিরিজের জন্য বাংলাদেশের দল ঘোষণা Dec 02, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক ভাবনায় ছাত্রদল নেতা যোগ দিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদে Dec 02, 2025
img
নির্বাচনের দিনে গণভোট নিয়ে আপত্তি নেই আট দলের: মাওলানা আব্দুল হালিম Dec 02, 2025
img
দীপিকার ৮ ঘণ্টা কাজের সিদ্ধান্তে সমর্থন রাকুলের Dec 02, 2025
img
ট্রাম্পের দেয়া সময়সীমা শেষ, ধীরে ধীরে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে আসছে মাদুরোর Dec 02, 2025
img
স্বর্ণপাম জয়ী ইরানি নির্মাতাকে এক বছরের কারাদণ্ড Dec 02, 2025
img
পুষ্পার সাফল্যের পর নতুন আলোচনায় আল্লু অর্জুন Dec 02, 2025
img
জীবনীচিত্রের প্রথম পোস্টারে ভি. শন্তারাম রূপে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী Dec 02, 2025
img
প্রভাসের ছবিতে প্রথমবার বিশেষ ভূমিকায় হুমা Dec 02, 2025
img
আমাদের দেশে চরিত্রবান নেতার অভাব : এ টি এম আজহার Dec 02, 2025
img
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Dec 02, 2025
img
আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের Dec 02, 2025
img
আমি ভীষণ ওয়ার্কহোলিক : মাধুরি দীক্ষিত Dec 02, 2025