ফিলিস্তিনের পক্ষে ও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একযোগে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে প্রায় এক হাজার ২০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে—যা একক দিনের ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে বড় আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং হালকা বৃষ্টির মধ্যেও ওয়াশিংটন ডিসি'র জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে বেশ কিছু সংগঠনও যুক্ত হয়। ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষেও স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ট্রাম্পবিরোধী জমায়েতে ফিলিস্তিনি পতাকা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন মার্কিনিরা। মিছিলে ইসরায়েলি হামলা এবং এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের নিন্দা জানানো হয়। এসময় গাজাকে বাঁচতে দাও এমন স্লোগানও ওঠে। গেল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি বড় ব্যানারও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে।

ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভের নাম দেয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। বিক্ষোভে একশত পঞ্চাশটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা দিতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না।

আন্দোলনের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রায় ১৫০টি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিন্সটনের অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন জানান, “আমি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডিওজিই বিষয়ক অবস্থান, এই সপ্তাহের ট্যারিফ, শিক্ষা—সবকিছুর বিরুদ্ধেই এসেছি। আমাদের গোটা দেশ, সব প্রতিষ্ঠান আজ হুমকির মুখে।”

সমাবেশস্থলে অনেকে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি ইউক্রেনের পতাকা নিয়েও হাজির হন। মঞ্চে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন। ওয়েস্ট কেপ মে, নিউ জার্সির অবসরপ্রাপ্ত মানি ম্যানেজার ৭৩ বছর বয়সী ওয়েইন হফম্যান বলেন, ‘এই ট্যারিফগুলোর ফলে লাল রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতি হবে, কর্মসংস্থান যাবে, ৪০১কে তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকজন হাজার হাজার ডলার হারাচ্ছে।’

কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ডে ৮৪ বছর বয়সী সু-অ্যান ফ্রিডম্যান একটি উজ্জ্বল গোলাপি লেখা পোস্টার নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার মিছিল করা শেষ, কিন্তু মাস্ক আর ট্রাম্পের মতো লোকেরা আবার আমাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে।’

৭৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী পল ক্রেটসম্যান প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে সোশ্যাল সিকিউরিটি ধ্বংস করে ফেলা হবে, আমাদের সেবাগুলো কে দেবে? এটা সরকারের কাঠামো ভেঙে ফেলার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে, যেন ট্রাম্প দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।’

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অনিশ্চয়তায় ১০ হাজার কোটির শিপমেন্ট Apr 07, 2025
img
জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষণা, সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে ৫৮ দিন Apr 07, 2025
img
‘ইসরায়েল ধ্বংসে ইরানের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল হামাস’ Apr 07, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ Apr 07, 2025
img
প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু Apr 07, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আভাস Apr 07, 2025
img
ট্রাম্প ট্যারিফে হুমকির মুখে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ! Apr 07, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ Apr 07, 2025
img
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার আইসিসিতে পাঠানোর কথা ভাবছে সরকার : প্রেস সচিব Apr 07, 2025
img
ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে হান্নান মাসউদের পোস্ট, সমালোচনা Apr 07, 2025