মাল্টিপ্লেক্সে বাড়ছে কমছে ছবির শো, কারো উচ্ছ্বাস কারো অভিযোগের সুর

ঈদুল ফিতরে ছয়টি ছবি মুক্তি পেয়েছে প্রেক্ষাগৃহে। সিঙ্গেল স্ক্রিন ছাপিয়ে সিনেমা ব্যবসার প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মাল্টিপ্লেক্স। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন সেসব প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলছে ঈদের ছবি। কিন্তু প্রদর্শনীর সংখ্যা ও সময় নিয়ে আছে অভিযোগ।

বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছেন কামরুল ইসলাম।

মাল্টিপ্লেক্সের দর্শক বাড়ছে ক্রমে। এ অগ্রগতির নেতৃত্বে স্টার সিনেপ্লেক্স। মাল্টিপ্লেক্স চেইন হিসেবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তারা।

দেশজুড়ে তাদের আটটি শাখা রয়েছে। হল ও পর্দার সংখ্যা বেশি হওয়ার সুবাদে ঈদের সব ছবিই প্রদর্শন করছে তারা। তবে দর্শকের অনাগ্রহের কারণে ঈদের তৃতীয় দিনেই ‘অন্তরাত্মা’ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো এখনো চলছে।

গতকাল স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘বরবাদ’-এর শো ছিল ৪০টি, ‘দাগি’র ২৬টি, ‘জংলি’র ৭টি, ‘চক্কর ৩০২’-এর তিনটি ও ‘জ্বীন ৩’-এর দুটি। এর মধ্যে ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’ টিমের অভিযোগ, দর্শকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের ছবির পর্যাপ্ত প্রদর্শনী দেওয়া হচ্ছে না। দুদিন আগে ‘বরবাদ’ নিয়ে শাকিব খানের ভক্তদের মুখেও একই অভিযোগের সুর শোনা গিয়েছিল। তবে গতকাল শোর সংখ্যা বাড়ানোয় ‘বরবাদ’ শিবিরে আনন্দ বিরাজ করছে।

দর্শক হলে গিয়ে টিকিট পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অন্য ছবি দেখছে। এর পরও ‘জংলি’র শো বাড়ানো হচ্ছে না। মিরপুরের সনি ও উত্তরা শাখায় শো ছিল, প্রতিটিই হাউসফুল গেছে। এর পরও এ দুটি শাখায় ‘জংলি’র শো দেওয়া হচ্ছে না। দর্শকদের জন্য ছবি বানিয়ে যদি তাদের দেখাতেই না পারি, তাহলে কী লাভ? চারদিকে দর্শকের আগ্রহ-হাহাকার দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে। আমাদের প্রযোজক অভি ভাই সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে বারবার কথা বলছেন, তারা আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু ফলাফল তো দেখছি না।”

এম রাহিমের মতে, এই ঈদে ‘জংলি’ একমাত্র ছবি, যেটা পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে দেখতে পারছে এবং পছন্দ করছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মন জিতে নিচ্ছে ছবিটি। কিন্তু স্কুল-কলেজ চালু হয়ে গেলে তারা ছবিটি দেখার সুযোগ পাবে না। তাই বিষয়টি আমলে নিয়ে ‘জংলি’র শো ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানিয়েছেন রাহিম।

সরকারি অনুদান নিয়ে ‘চক্কর ৩০২’ বানিয়েছেন শরাফ আহমেদ জীবন। ছবিটি দেখার পর সকলেই ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কিন্তু হল কিংবা প্রদর্শনী—কোনোটাই ঠিকঠাক পাচ্ছে না ছবিটি। জীবন বলেন, “যাঁদের দেখাতে পারছি, তাঁরা ভালো বলছেন। কিন্তু সবার কাছে তো ছবিটা নিয়ে যেতে পারছি না। পর্যাপ্ত হল পাইনি, শো যা পেয়েছি বা পাচ্ছি, সেগুলোর আবার টাইমিং সুবিধাজনক না। আসলে বাস্তবতা অনুযায়ী, প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে ছবির সংখ্যা বেশি। আমি যেমন ‘চক্কর ৩০২’ ঈদে মুক্তি দিলাম, অন্যরাও চেয়েছেন তাঁদের ছবি ঈদে দিতে। ফলে একটা চাপ তো তৈরি হয়েছে। আমার ছবিটা হয়তো মসলাদার নয়, প্রচারণাও সেভাবে করা হয়নি। ফলে শুরুতে তেমন হাইপ ছিল না। কিন্তু এখন দর্শকের মুখে মুখে ছবিটার হাইপ তৈরি হচ্ছে, অথচ শো নেই! মাল্টিপ্লেক্সকে আর কী দোষ দেব, তাদের কাছে এটা ব্যবসা। সুতরাং কোন ছবি, কিভাবে, কখন চালাবে, সেটা তারা জানেন। কিন্তু শুরুতে আমার ছবির ২১টি শো ছিল, সেটা এখন ৪-এ চলে এলো! এটা আমি কাকে বলব? এসব আক্ষেপের সঙ্গে আশার কথা বলি, দর্শক ছবি দেখছে। ভালো ছবির দর্শক তৈরি হচ্ছে। এই দর্শকের কথা ভেবে যেন মাল্টিপ্লেক্সগুলো ছবির শো বরাদ্দ দেয়, এটুকুই চাই।”

এসব অভিযোগের বিপরীতে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঈদের সব ছবি ভালো যাচ্ছে। প্রায় সাত-আট মাস পর প্রেক্ষাগৃহ জমে উঠেছে। এভাবে মাস খানেক চলবে বলে আশা করছি। ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’ এমনকি ‘চক্কর ৩০২’ ছবিটাও দর্শক দেখছে। শো সংখ্যা দিয়ে আসলে ছবি জাজ করা যাবে না। শো বাড়বে, কমবে এটাই স্বাভাবিক। বড় ছবি কিংবা জনপ্রিয় তারকার ছবির শো বেশি হবে, আবার দর্শকের চাহিদার ওপর নির্ভর করে সেটা বাড়বে-কমবে; এভাবেই চলে। এটা আমাদের বিজনেস পলিসি অনুযায়ী সাজানো হয়। সব কিছু তো খোলাসা করা সম্ভব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা সব ছবিকেই সুযোগ দিই। এই যে ‘চক্কর ৩০২’ তুলনামূলক স্বল্প পরিসরের ছবি, কিন্তু ভালো ছবি তো। তাহলে এটাকে কি আমরা শো দেব না? না দিলে তারা উৎসাহ পাবে কিভাবে? ছোট-বড় সব ছবিকেই আমরা শুরু থেকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। তবু ইন্ডাস্ট্রির অনেকে আমাদের ওপর নাখোশ। এ নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলারও নেই।”

ঈদ উৎসবে পর্যাপ্ত বাংলা ছবি থাকার পরও হলিউডের ছবি চালানো হচ্ছে। এ নিয়েও রয়েছে অনেকের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে মেসবাহর ব্যাখ্যা, “দেখুন, আমরা দর্শকের কথা ভেবে শো রাখি। বাংলার পাশাপাশি বিদেশি ছবির মাধ্যমেই তো সিনেপ্লেক্সের দর্শক তৈরি হয়েছে। তাহলে যারা হলিউডের ছবি দেখতে চায়, তাদের কথা ভাবব না? সে জন্য অল্প কিছু শো রাখি। আবার দর্শকের সমাগম না হলে ঘুরেফিরে বাংলা ছবিকেই সেটা বরাদ্দ দিই। গত বছর ‘তুফান’-এর দাপটে হলিউডের ছবিও তো টিকতে পারেনি। এবারও তাই হচ্ছে। যেহেতু এটা একটা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আমরা গ্রাহকের জন্য সব অপশন খোলা রাখতে চেষ্টা করি।”

এদিকে ঢাকার আরেকটি মাল্টিপ্লেক্স লায়ন সিনেমাসে চলছে পাঁচটি ছবি। সেখানেও বেশির ভাগ শো ‘বরবাদ’-এর দখলে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, “খুব ভালো যাচ্ছে ছবিগুলো। বিশেষ করে ‘বরবাদ’ দারুণ চলছে। এ জন্য এই ছবির শো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সাতটি শো চলছে। আর ‘দাগি’র চারটি, ‘জংলি’ ও ‘চক্কর ৩০২’-এর দুটি করে শো চালানো হচ্ছে। দর্শকের আগ্রহের ওপর নির্ভর করে নিয়মিত শো বাড়ানো-কমানো হয়।”

মাল্টিপ্লেক্স হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্লকবাস্টার সিনেমাসও। গতকাল এই প্রেক্ষাগৃহে ‘বরবাদ’-এর প্রদর্শনী ছিল ১০টি। এ ছাড়া ‘দাগি’র পাঁচটি, ‘জংলি’র তিনটি ও 'চক্কর ৩০২’-এর তিনটি প্রদর্শনী হয়েছিল।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপির সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক: নির্বাচন নিয়ে ৪ শর্ত Apr 10, 2025
img
শ্বশুরবাড়ি থেকে তোফায়েল আহমেদের পিএস গ্রেফতার Apr 10, 2025
img
চীন বাদে সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প Apr 10, 2025
img
ট্রাম্পের বন্ধু পরিচয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশের চেষ্টা Apr 10, 2025
img
আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে Apr 10, 2025
img
বিশ্বনেতারা এখন আমাকে ‘স্যার’, ‘স্যার’ করছেন: ট্রাম্প Apr 09, 2025
img
লিটনের জায়গায় সুযোগ পেয়ে তারই উদাহরণ টানলেন অঙ্কন Apr 09, 2025
img
আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার Apr 09, 2025
img
দিল্লিতে গ্রেফতার পাঁচ বাংলাদেশি : পুলিশ বলছে ‘রূপান্তরকামী’ Apr 09, 2025
img
তিস্তা পানি চুক্তি-দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন জয়সওয়াল Apr 09, 2025