ঋণের শর্ত শিথিলে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হওয়ায় এনবিআর শর্তটি শিথিল করার জন্য আইএমএফের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কিন্তু, আইএমএফ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। গত সোমবার (৭ এপ্রিল) আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদল এনবিআর চেয়ারম্যান এবং কাস্টমস, আয়কর, ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি তিন মাসে আদায় করতে হবে এক লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বাড়তি এ অর্থ আদায় করা ‘অসম্ভব’ তুলে ধরা হলেও তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আইএমএফ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা কিভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, এটি অসম্ভব। আমরা তাদের এটি কমাতে প্রস্তাব দিয়েছি। তারা তাতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে আগামী বুধবার (৯ এপ্রিল) এনবিআরের তিন অনুবিভাগের সঙ্গে সংস্থাটির কর্মকর্তারা আবারও বৈঠকে বসবেন। এ শর্তপূরণ ছাড়া সমঝোতা করা না গেলে ঋণের বাকি অর্থ ছাড়ও বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, আইএমএফের সঙ্গে এনবিআর সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়ায় শর্ত শিথিল হতে পারে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আইএমএফ চলমান ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত ০.৯ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে হবে বা বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। তা কিভাবে আদায় হবে তার সুনির্দিষ্ট কৌশল জানাতে পারেনি এনবিআর।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আইএমএফও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বিলাসী পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে যেসব কর অব্যাহতি রয়েছে তা চলতি জুনের পর বাদ দেওয়া এবং সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা।

এর বাইরেও প্রশাসনিক সংস্কার, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করা, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়নের অগ্রগতি, আয়কর বিভাগের ডিজিটাইজেশন প্রকল্পের খসড়া প্রণয়নের অগ্রগতি, করপোরেট কর ও রিটার্ন অনলাইনে জমার সময়সীমা নির্ধারণও উঠে এসেছে প্রস্তাবনায়।

ঋণ কর্মসূচির শর্তের আওতায় এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে তিন মাসে এক লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে। বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এটি দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭.৯ শতাংশ করার শর্ত রয়েছে। তাতে এ অর্থবছরে এনবিআরকে আদায় করতে হবে চার লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআরের সদস্য (আয়করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা গত অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৪ শতাংশ করেছি। আইএমএফ আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা জানে। তারাই তুলেছে। কিন্তু তাদের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে বাড়তি আদায় করার। তাই তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রার যে শর্ত তা থেকে সরে আসেনি। চলতি অর্থবছরে দশমিক ৫ শতাংশ কর-জিডিপি বাড়াতে হবে।’

এরই মধ্যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে জুনে ছাড় হওয়ার আশা করছে।

আরএ/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
কুয়েট ভিসি লজ্জায় পদত্যাগ না করলে বাধ্যতামূলক সরানো হোক: সারজিস আলম Apr 23, 2025
img
৮২ বছর বয়সেও ক্লান্তিহীন অমিতাভ, জানালেন ফিট থাকার রহস্য Apr 23, 2025
img
স্পাইডার-ম্যান হতে চেয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন! Apr 23, 2025
img
আওয়ামীপন্থী সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন Apr 22, 2025
img
ছয় বা বেশি সন্তানের মায়েদের জাতীয় মেডেল দেবেন ট্রাম্প Apr 22, 2025
img
‘এপিএসরা দুর্নীতি করবে আর উপদেষ্টারা বলবেন আমার টাকা-পয়সা নাই!’ Apr 22, 2025
img
আওয়ামী মুক্ত করার নামে প্রশাসনকে বৃদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হচ্ছে: মাসুদ কামাল Apr 22, 2025
img
যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলের বৈঠক Apr 22, 2025
img
কেরানীগঞ্জে বিএনপি নেতার ওপর হামলা, গ্রেফতার ১ Apr 22, 2025
img
আগামীতে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠন হবে : আমানউল্লাহ আমান Apr 22, 2025