জনসভা করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে ৭২ ঘণ্টা আগে

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, মিছিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রার্থীদের জনসভা আয়োজনের জন্য ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে, যা বিধিমালার চূড়ান্ত সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করতে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি কমিশনের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হবে।

সব ধরনের মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রস্তাবিত বিধিমালায় তা উল্লেখ করা হয়নি। প্রচারের জন্য জনসভা, পথসভার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহন ব্যবহার বা মশাল ব্যবহার করা যাবে না। জনসভার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে নিতে হবে পুলিশের অনুমিত, আর ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। পোস্টারের ব্যবহার তুলে দিয়ে ব্যানারে প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। এক্ষেত্রে কাপড়ের তৈরি সাদা কালো ব্যানার টানানো যাবে, যেখানে প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ব্যতীত কারো ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

অনলাইনে প্রচার ও জনসংযোগ
প্রথবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো আনছে কমিশন। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে সব ধরনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসংযোগ করার পাশপাশি অনলাইনে প্রতীক বরাদ্দের আগেও প্রার্থী ও তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন প্রকার প্রচার চালাতে পারবেন ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন মাধ্যমে প্রচার চালাবেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও করে থেকে প্রচার চালাবেন সে তথ্যও দিতে হবে। এছাড়া অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাবও প্রতি সাতদিন পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।

মাইকে প্রচারের সময়
নির্বাচনী প্রচারের মাইকের ব্যবহার তথা শব্দদূষণ কমাতে পরিবেশ আইন প্রতিপালনের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে। আগে যা রাত আটটা পর্যন্ত ছিল। মাইকের শব্দ অবশ্যই ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে।

পলিথিনের ব্যবহার রোধ
নির্বাচনী প্রচারে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারে ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ব্যানারের পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। আগে এ নিয়ে ইসির নির্দেশনা থাকলেও বিধিমালায় কোনো বিধান ছিল না।

এছাড়া প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে, যারা কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে কেবল ভোট দিতে যেতে পারবেন। সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় ব্যানার লিফলেট সাঁটিয়ে দেওয়া যাবে না। টানিয়ে প্রচার করতে হবে। আগের মতোই নিষিদ্ধ থাকবে দেওয়াল লিখন।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’-এর সংজ্ঞাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন পূর্ব সময় বলছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা সময় পর্যন্ত বোঝায়। কিন্তু এখন পুরো সময়টিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব সময় বলতে জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে সংসদের সাধারণ নির্বাচন কিংবা কোনো শূন্য আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পূর্ব সময় পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে। আর নির্বাচনকালীন সময় বলতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হচ্ছে। আর নির্বাচন পরবর্তী সময় বলতে গেজেট আকারে ফল প্রকাশের পরবর্তী ৪৫ দিন সময় পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে।

এক্ষেত্রে নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন ইত্যাদি নিষিদ্ধ না হলেও নির্বাচনকালীন নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটারকে ভোটার স্লিপ সরবরাহ করতে কোনো বাধা না থাকলেও প্রার্থীর নাম, ছবি ও প্রতীক ব্যতিত অন্য কিছু উল্লেখ করা যাবে না। উল্লেখ থাকতে হবে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা ও তারিখ। গেট, তোরণ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের মতো নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জীবন্ত প্রাণী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিধানও বহাল থাকছে।

শাস্তি
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান থাকছে। কোনো দল কোনো বিধান ভাঙলে ৫০ হাজার টাকার পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আবার অনলাইন প্রচারে বিধান ভাঙলে ডিজিটাল অথবা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে প্রার্থী ও দলকে বিধিমালা মেনে চলার প্রত্যায়ন ইসির কাছে জমা দিতে হবে একই সঙ্গে বিধান লঙ্ঘনের কারণে শাস্তি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারও করতে হবে।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া করার জন্য বসেছিলাম। প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত করে কমিশনে প্লেস করবো। এরপর কমিশন চূড়ান্ত করবে। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবো। আশা করি চমৎকার আচরণবিধি হবে।

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো চিন্তার খোরাক তৈরির কারখানা : শিশির মনির Nov 21, 2025
সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম Nov 21, 2025
img
আমি যে দলটা করি সেটা হলো মুক্তিযোদ্ধার দল : ফজলুর রহমান Nov 21, 2025
img
দক্ষিণ আফ্রিকায় নারীর প্রতি সহিংসতাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা সরকারের Nov 21, 2025
img
জানুয়ারিতে ঢাকায় আসছে বিশ্বকাপ ট্রফি Nov 21, 2025
img
টেস্ট ক্যারিয়ারে সাকিব আল হাসানকে ধরে ফেললেন তাইজুল ইসলাম Nov 21, 2025
img
অন্যান্য স্থানের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল চট্টগ্রাম, ৭৫ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ Nov 21, 2025
img
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমানউল্লাহ আমান Nov 21, 2025
img
পড়াশোনার জন্য ফুটবল ছাড়লেন ম্যান সিটি একাডেমির ফুটবলার! Nov 21, 2025
img
তারেক রহমান গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন: আইয়ুব খান Nov 21, 2025
img
ভারনাসি চলচ্চিত্র শিরোনাম নিয়ে বিতর্ক Nov 21, 2025
img
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে পতাকা বৈঠকের পর বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ Nov 21, 2025
img
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান শুরু ডিএনসিসির Nov 21, 2025
img
এক বছরের বেশি সময় পর দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নর্কিয়া Nov 21, 2025
img
টনি বেইগকে ঘিরে জল্পনার মাঝেই নার্গিসের স্বীকারোক্তি Nov 21, 2025
img
সত্য-মিথ্যার সীমা মুছে দিচ্ছে প্রযুক্তি: কীর্তি সুরেশ Nov 21, 2025
img
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে নতুন তথ্য দিল বিডব্লিউওটি Nov 21, 2025
img
দেশজুড়ে ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ Nov 21, 2025
নারীদের জন্য টয়লেট ও নামাজের স্থান করার ঘোষণা জামায়াত প্রার্থীর! Nov 21, 2025
ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত রাবির শেরে বাংলা হল, শিক্ষার্থীদের নতুন হলে স্থানান্তর Nov 21, 2025