বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হওয়ায় এমন মনোভাব পোষণ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা।

মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা এমন মনোভাব পোষণ করেন।

ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রতিনিধিদলে এলজির কর্মকর্তাসহ কোরিয়ার টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বৃহৎ বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছিলেন।

প্রতিনিধিদলটি সোমবার (০৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করেন। ইয়াংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত এই শিল্পপার্কে অনেক বিনিয়োগকারী তাৎক্ষণিকভাবে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শ্রম, শিল্প, জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিতে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এমন সময়ে আপনারা বাংলাদেশে এসেছেন যখন আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করছি। এই নতুন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এখন সহজ ও ঝামেলামুক্ত।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনাদের জন্য বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা আমাদের দায়িত্ব। আমি জানি গত ১৬ বছরে আপনাদের অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে, আমরা সেই সময়ের ক্ষতিপূরণ দিতে চাই।’

১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসা কিহাক সাং প্রধান উপদেষ্টার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সরকারের ইতিবাচক নীতির প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেন যাতে তারা বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আপনাদের ব্যবসার গন্তব্য এবং অনুপ্রেরণার উৎস বানান। আপনারা কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা রাখেন।’

কিহাক সাং ঘোষণা দেন, ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করবে, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষ টেক্সটাইল হাবে পরিণত করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে।

তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেরিত সাম্প্রতিক চিঠিরও প্রশংসা করেন, যা নতুন মার্কিন প্রশাসনের নীতির কারণে উদ্ভূত উদ্বেগ নিরসনে সহায়ক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিঠিটি অত্যন্ত সুচিন্তিত ছিল’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের পরামর্শও দেন।

বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন কাঠামো অনন্য উল্লেখ করে কোরিয়ান ফ্যাশন ও রিটেইল খাতের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতও দ্রুত বিকাশমান এবং বিশ্ব বাণিজ্য কাঠামোতে দেশটি শীর্ষ ওষুধ রপ্তানিকারক হতে পারে। একজন বিনিয়োগকারী দেশে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট) কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানান।

অধ্যাপক ইউনূস প্রতিনিধিদলের একজন শীর্ষ কোরীয় সার্জনকে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

এসএম

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এক সপ্তাহ পর শাস্তি পেলেন ফখর জামান Dec 05, 2025
img
নার্সদের ‘ইবাদত হিসেবে সেবা’ করার আহ্বান জামায়াত আমিরের Dec 05, 2025
img
একটি দলের মূল ব্যক্তির সুস্থতার বিষয় আছে, সব দল প্রস্তুত হওয়ার পর তফসিল হোক : নাহিদ ইসলাম Dec 05, 2025
img
বার্ধক্যকে ভয় না পাওয়াই জীবনের সৌন্দর্য: মাধুরী দীক্ষিত Dec 05, 2025
img
হোয়াইট হাউসে বলরুম নির্মাণে নতুন স্থপতি নিয়োগ দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প Dec 05, 2025
img
শরণার্থী-আশ্রয়প্রার্থীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ কমাল যুক্তরাষ্ট্র Dec 05, 2025
img
নামাজ-কুরআন ও দ্বীনের আলোকে চলতে চাই: অভিনেত্রী মৌ খান Dec 05, 2025
img
ভারতমুখী নয়, দেশমুখী রাজনীতি প্রয়োজন : ডাকসু ভিপি Dec 05, 2025
img
বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদের সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছে না সরকার, অভিযোগ রাহুল গান্ধীর Dec 05, 2025
img
জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন Dec 05, 2025
img
এনসিপির ৫ নেতার বিরুদ্ধে নেত্রীর মামলা দায়ের Dec 05, 2025
img
দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে আলোচিত সিনেমা ‘খিলাড়ি’ Dec 05, 2025
img
বেগম জিয়ার অসুস্থতার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই: খসরু Dec 05, 2025
img
ঐতিহাসিক বৈশ্বিক ভূমিকা থেকে সরে আসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র Dec 05, 2025
img
মিরপুর চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহ Dec 05, 2025
img
শ্রমিকরা এলাকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি : প্রিন্স Dec 05, 2025
img
পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের নতুন ঘোষণা Dec 05, 2025
img
গাজা পুনর্গঠনে ১০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা দেবে চীন Dec 05, 2025
img
কিসের টানে ঢাকা ছাড়লেন অভিনেত্রী পরীমণি? Dec 05, 2025
img
বিশ্বকাপে ফেভারিটদের তালিকায় মেসির চোখে নেই পর্তুগাল Dec 05, 2025