গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই তা পৌঁছেছে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারে। ব্যাংকগুলো বলছে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ফলে প্রবাসী আয় ব্যাংক খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবীণ অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ভারতীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রভাব কমে যাওয়ায় বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরজুড়ে মাসভিত্তিক আয় ছিল গড়ে কমবেশি দুই বিলিয়ন বা দুশো কোটি ডলার রেমিট্যান্স। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্টে দেশের পট পরিবর্তনের পর থেকেই চমক লাগে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে। ঊর্ধ্বমুখী ধারায় যা মার্চে সব রেকর্ড ছাপিয়ে দাঁড়ায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
গত মার্চে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ব্যাংকগুলো জানায়, বিগত সময়ে রেমিট্যান্স যতটা এসেছে, তার তথ্য সঠিক সময়ে প্রকাশেও দ্বিধা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। বর্তমানে সুশাসন ফেরায় আশান্বিত করছে প্রবাসী আয়। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আবুল বাসার বলেন, বর্তমানে টাকা পাঠানোর সঙ্গে হিসাবে যোগ হচ্ছে। ফলে পরিসংখ্যানও সঠিক পাওয়া যাচ্ছে।
বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা অব্যবস্থাপনায় কাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়েনি প্রবাসী আয়ে। এর পেছনে রয়েছে হুন্ডির মাফিয়া সাম্রাজ্যের শক্তিশালী গল্প। তথ্য বলছে, এই মাফিয়া ব্যবসায়ীদের রক্ষাকবচ হয়ে পেছনে থাকে ক্ষমতায় থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো।
মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে এক শ্রেণির মাড়োয়ারিদের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসার গোড়াপত্তন বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। যার মূল নিয়ন্ত্রক এখনো ভারতীয় এই ব্যবসায়ীরাই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হয়েছে তিক্ত। এছাড়া অবৈধ ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় তারা অনেকটা গুটিয়ে ফেলেছে কার্যক্রম। এতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তবে ভিসা ও নানা জটিলতায় তারা এখন কিছুটা হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।
অন্যদিকে হুন্ডি আরও নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য খাতে যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণ ও প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদ ও এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বাণিজ্য খাতে যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণ ও প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। এতে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে মানুষকে আগ্রহী করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ১২ মাসে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই এসেছে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মার্চের প্রবাসী আয় প্রতি মাসেই মিলতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
আরএ/টিএ