কবরের ব্যবসা জায়েজ কিনা, ফতোয়া দিলেন আলেম

পূর্বাচলে ২০০ বিঘা জমি নিয়ে ‘কবরের জমি’ বিক্রির ব্যবসা করছে আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমআইএস হোল্ডিংস লিমিটেড। আধ্যাত্মিক স্লোগান দিয়ে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পানজোরা গ্রামে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবেও ব্যাপক  প্রচারণা চালাচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় আবাসন মেলায়ও অংশ নিয়েছিলেন তারা।

পূর্বাচলে কবরের ব্যবসা: সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা

এমআইএস হোল্ডিংসের এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পূর্বাচল রাওয়াতুল জান্নাত কবরস্থান’। এই প্রকল্পে একটি কবরের জন্য জায়গা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে শুরুতেই গুণতে হবে ১৫ হাজার টাকা। সার্ভিস চার্জ বাবদ অফেরতযোগ্য এই অর্থ দিতে হবে কবরের মালিককে।

এছাড়া বুকিং মানি হিসেবে দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা; এই টাকাও অফেরতযোগ্য।

সার্ভিস চার্জ ছাড়া এক খণ্ড কবরের  (সাড়ে ৩ ফুট প্রশস্ত এবং ৭ ফুট দৈর্ঘ্য) দাম পড়বে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে এক হাজার টাকা। আর এই চার্জ দিতে হবে টানা ১৫ বছর অর্থাৎ এখানে গুণতে হচ্ছে আরও ১৫ হাজার টাকা।

তাহলে প্রায় সাড়ে ২৪ বর্গফুট আয়তনের একটি কবরে মোট খরচ পড়ছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এমআইএস হোল্ডিংসের এই কবরের ব্যবসা নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ এর পক্ষে বলেছেন বা আবার কেউ একে ‘জঘন্য ব্যবসা’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

তবে এ ধরনের ব্যবসা শরিয়ত সম্মত কিনা তা যাচাইয়ে সম্প্রতি দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদ্রাসার ফাতওয়া ও ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। একইসঙ্গে এমআইএস হোল্ডিংসের কবরের ব্যবসা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কপি দেয়া হয় তাদের।

তিনদিন পর মাদ্রাসাটির ইফতা সমাপনী বর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে একটি লিখিত ফতোয়া দেন।

ফতোয়াটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘কবরের জন্য জমি ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ আছে। তবে অন্য সব ব্যবসার ন্যায় এ ক্ষেত্রেও শরিয়ত প্রদত্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শরীয়াত প্রদত্ত অন্যতম নীতি হলো-

ক. বুকিংমানি ফেরতযোগ্য হওয়া। অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ হলে বুকিং মানি ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়া।

খ. ক্রয় করার পর ক্রেতার জন্য তা অন্যদের নিকট বিক্রি করে দেওয়ার সুযোগ থাকা।

গ, ওয়াকফকৃত না হলে মালিকানাধীন অন্যান্য সম্পত্তির ন্যায় এতেও উত্তরাধীকার সূত্রে জারি হওয়ার সুযোগ থাকা।

এছাড়াও ব্যবসার ক্ষেত্রে শরিয়াহ প্রদত্ত বহু নীতিমালা রয়েছে। প্রাসঙ্গিকতার কারণে এগুলো উল্লেখ করা হল।

পূর্বাচল রওজাতুল জান্নাহ এসব নীতিমালা অনুসরণ করলে তাদের এ ব্যবসা বৈধ বলে বিবেচিত হবে, অন্যথায় তা বৈধ হবে না। উল্লেখিত নীতিমালা লংঘন করে তারা কারো সঙ্গে চুক্তি করলে তা শরিয় দৃষ্টিতে ফাসিদ বিক্রয় বলে গণ্য হবে।

এক্ষেত্রে জমি বুঝে পাওয়ার মাধ্যমে ক্রেতা এর মালিক বলে পরিগণিত হবে। এক্ষেত্রে তার বাজারমূল্য পরিশোধ করতে হবে। তবে অনতিবিলম্বে এ চুক্তি বাতিল করা তাদের ওপর আবশ্যক।’

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: