পূর্বাচলে কবরের ব্যবসা: সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা

পূর্বাচলে ২০০ বিঘা জমি নিয়ে ‘কবরের জমি’ বিক্রির ব্যবসা করছে আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমআইএস হোল্ডিংস লিমিটেড। এই নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবেও ব্যাপক  প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

আধ্যাত্মিক স্লোগান দিয়ে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পানজোরা গ্রামে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই প্রকল্প শুরু করা হয়নি বলে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েব সাইটে দাবি করলেও এক একটি কবরের দাম পড়ছে এক কাঠা জমির মূল্যের সমান। অর্থাৎ সাধারণ জমি ব্যবসার চেয়েও প্রায় ৩০ গুণ বেশি টাকা হাতানোর ফাঁদ পেতেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

কবরের জমি বিক্রির ব্যবসার জন্য এমআইএস হোল্ডিংস ‘পূর্বাচল রওজাতুল জান্নাহ’ নামে একটি ওয়েব সাইট চালু করেছে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর।

সেখানে উল্লেখ আছে:

‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে তারা কবরের জমি বুকিং গ্রহণ করছেন। বুকিং মানি হিসেবে আপনাকে দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। যা অফেরতযোগ্য।

সার্ভিস চার্জ ছাড়া এক খণ্ড কবরের  (সাড়ে ৩ ফুট প্রশস্ত এবং ৭ ফুট দৈর্ঘ্য) দাম পড়বে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে এক হাজার টাকা। আর এই চার্জ দিতে হবে টানা ১৫ বছর অর্থাৎ এখানে আপনাকে গুণতে হচ্ছে আরও ১৫ হাজার টাকা। তাহলে প্রায় সাড়ে ২৪ বর্গফুট আয়তনের একটি কবরে মোট খরচ পড়ছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

এমআইএস হোল্ডিংসের এই কবরের ব্যবসা নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এর পক্ষে বলেছেন বা আবার কেউ একে ‘জঘন্য ব্যবসা’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী কবরের নামে ব্যবসাকে ‘নেতিবাচকভাবেই’ দেখছেন।

সম্রাট নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ভাইরে,তোমাদের মধ্যে কি একটুও ভয় নাই! তোমারা তো কোনো কিছুই ছাড়ো না। কিন্তু আপাতত কবর নিয়ে এসব ফাজলামি করা বাদ দাও। হে আল্লাহ! সবাইকে হেদায়েত দান করুন।’

রিফা তাসমিয়া নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের নবীজী হজরত মুহাম্মদ(সা.) এর কবর রওজাতুল জান্নাতের পাশে। আর এরা এটা নিয়ে অসভ্যপনা করে।’

বোরহান উদ্দিন লিখেছেন, ‘আপনার যদি সম্পদ থাকে, তবে আপনার কবর হওয়া উচিৎ নিজের জায়গায়। এটা ইসলাম সম্মত। আর না থাকলে ভিন্ন কথা। সরকারি জায়গায় কবর দিতে পারেন। এই সমস্যাটা শহরে বসবাসকারী বাসার মালিকসহ অনেকেরই। তাই এই স্থায়ী কবর ব্যবস্থাটা ভালো। আমরা সবাই শিক্ষিত তাই আমাদের জেনে কথা বলা উচিৎ। না জেনে বিভ্রান্তি ছড়ানো কার কাজ আপনারাই ভালো জানেন।’

পূর্বাচল রওজাতুল জান্নাহ নামে একটি ফেসবুক পেজের বিজ্ঞাপনে তারিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘কবর নিয়েও যে ব্যবসা করা যেতে পারে তা এই টিভিসি দেখে শিখলাম।’

'রওজাতুল জান্নাহ' প্রকল্প সম্পর্কে অধিকাংশ সাধারণ মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে কীভাবে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি?

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এমআইএস হোল্ডিং লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, 'সাধারণ মানুষ এ বিষয় সমালোচনা করতেই পারে। কারণ এই ধারণাটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। আমরা খুবই পরিকল্পিতভাবে এই প্রকল্পটি গত বছরের আগস্টে চালু করেছি।'

তিনি বলেন, 'এক সময় মিনারেল ওয়াটার যখন নতুন বাজারে আসলো তখন অনেকেই এই ব্যবসাটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। মানুষ তখন বলতো, পানি খাওয়াইয়া মানুষ থেকে টাকা নিচ্ছে।'

এই প্রকল্প ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় দাবি করে তিনি বলেন, 'দেখুন হাসপাতালে যেমন রোগীরা চিকিৎসা নেয় তখন এটিকে আমরা সেবা হিসেবে দেখি। ঠিক তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে এটিও একটি সেবামূলক প্রকল্প।'

একটি কবরের জন্য এত বেশি টাকা কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আফরোজা সুলতানা বলেন, 'যারাই আমাদের কাছ থেকে কবরের জমি কিনছেন তাদের সাফ কবলা দলিল করে দিচ্ছি। আজীবন এই কবরের রক্ষণাবেক্ষণ করব আমাদের প্রতিষ্ঠান। তাও মাত্র ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। তাই এই টাকা মোটেও বেশি না।'   

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on: