দৃশ্য ভয়ের, পেয়েছে হাসি

সিনেমায় দর্শককে প্রাণপণে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক কামরুজ্জামান রুমান। তবে শেষ পর্যন্ত দর্শকেরা ভয় পেলেন কি? নাকি ভয়ের বদলে হাস্যরস উৎপাদন করেছে ছবিটি?

সুমন নামে এক শিশুকে সমাহিত করার ৩৬ ঘণ্টা পর কবর খুঁড়ে দেখা যায়, সুমন কবরে দিব্বি বসে আছে। এমন বহুশ্রুত গল্পকে পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা। দেশে ভৌতিক সিনেমার চল নেই বললেই চলে। তবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া একের পর এক ভৌতিক সিনেমা নির্মাণ করছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে জ্বীন সিরিজের তৃতীয় সিনেমা মা: জ্বীন–৩।

সিনেমার গল্পে দেখা গেছে, সুমনের বেঁচে ফেরার রহস্যের জট খুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বিজয়কে নিয়ে গ্রামে আসেন তাঁর শিক্ষার্থী ফারিয়া। চেয়ারম্যানের মেয়ে ফারিয়া, একই গ্রামের ছেলে সুমন। রহস্যের কূলকিনারা করতে এসে নিজেই একের পর এক অতিপ্রাকৃত ঘটনার জালে আটকা পড়েন বিজয়। ধন্দে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত জট খোলে?

সেই আলাপ তোলা বাহুল্য। রহস্যের জালটা ঠিকঠাকমতো বুনতে পেরেছেন কি নির্মাতা? সেটাই বড় প্রশ্ন। সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য ঢিলেঢালা, মেদবহুল; পরিশীলিত নয়। সংলাপ কখনো কখনো খাপছাড়া। সিনেমার কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য করেছেন আবদুল আজিজ।

বলা হয়, পৃথিবীতে নতুন কোনো গল্প নেই। পুরোনো গল্পকে ধারালোভাবে উপস্থাপন করতে পারাটাই মুনশিয়ানা। তাবড় গল্পকার, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতারাও সেটাই করে চলেছেন। মা: জ্বীন–৩ সিনেমার গল্পে তো নতুনত্ব নেই–ই, সঙ্গে উপস্থাপনের ভঙ্গিটাও বহুল চর্চিত, গৎবাঁধা। ফলে দর্শকেরা কখনো কখনো ‘হাই’ তোলার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন।

সিনেমার গল্পটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। পাশাপাশি ছবিটি কতটা ভৌতিক ছবি হতে পেরেছে? ছবিতে একাধিক দৃশ্যে দর্শককে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। তবে কোনো কোনো দৃশ্যে গা ছমছম তো করেইনি, উল্টো হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। ভৌতিক দৃশ্যের সঙ্গে আবহসংগীতের দূরত্বটা ঘোচাতে পারেননি পরিচালক। ফলে দৃশ্যগুলো ছিল প্রাণহীন, ম্যাড়মেড়ে। অথচ আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দৃশ্যগুলো করা গেলে প্রাণ পেত।

কোনো কোনো দৃশ্যকে অবান্তর লেগেছে। এর মধ্যে সুমনকে খুঁজতে তাঁর বাড়িতে না গিয়ে মাঠের মধ্যে ড্রোন ওড়ানোর দৃশ্যটি খটকা লাগার মতো। তান্ত্রিকের ‘জিন তাড়ানোর’ দৃশ্যটি আরোপিত লেগেছে। বিজয় ও ফারিয়ার একটি রোমান্টিক দৃশ্যে হেসে কুটি কুটি হয়েছেন দর্শকেরা। দর্শকের কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটি মোটেও রোমান্টিক ছিল না।

গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপের পর শিল্পীদের অতি অভিনয় ছবিটিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেনি। অতি অভিনয়ের দৌড়ে শীর্ষে ছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। ছবিতে ফারিয়া নামের গ্রামের এক মেয়ের চরিত্র করেছেন তিনি। তবে ছবিজুড়ে চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে পারেননি। অপরিণত অভিব্যক্তি আর কণ্ঠস্বরে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন ফারিয়া। তবে গানের দৃশ্যে ফারিয়ার অভিব্যক্তি যথাযথ ছিল।

গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর মধ্যে সুমনের মায়ের চরিত্রে তানিয়া আহমেদের অভিনয় আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় চরিত্রে সজলের অভিনয়ও মন্দ ছিল না।

ভৌতিক সিনেমায় আবহসংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এ সিনেমায় তা খুব একটা ছাপ ফেলতে পারেনি। কিন্তু সিনেমার গানগুলো শ্রুতিমধুর। বিশেষ করে ‘কন্যা’ গানটি হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো। রবিউল ইসলাম জীবনের কথায় গানটিতে কণ্ঠ দেন ইমরান ও কনা। সুর ও সংগীতও করেছেন ইমরান।

আরএম/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
৭১ এর রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে : শারমীন এস মুরশিদ Apr 19, 2025
img
ডেভিড ধাওয়ানের সিনেমায় বরুণের সঙ্গে থাকছেন তিন নায়িকা Apr 19, 2025
img
অভিনেত্রীর পোশাক ছেঁড়ার অভিযোগে বাড়ি ছাড়লেন অভিনেতা Apr 19, 2025
img
‘কিং’-এ বাদশার সঙ্গে প্রথমবার পর্দায় দেখা যাবে বলিউডের সার্কিটকে Apr 19, 2025
img
কেমন গয়না পছন্দ করেন মিমি? Apr 19, 2025
img
কয়েদির বেশে ‘দাগি’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে শতাধিক নিশো ভক্ত Apr 19, 2025
img
বড় হারের পর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন এখন অনিশ্চিত Apr 19, 2025
থানা পরিদর্শনে গিয়ে যে কথা প্রচার করতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Apr 19, 2025
পুলিশের ইনএক্টিভনেস নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Apr 19, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন Apr 19, 2025