চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ

চাহিদা বাড়ায় বরগুনায় বর্তমানে ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ১ লাখ ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। স্থানীয় মৎস্য পাইকারদের দাবি- পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চাহিদার তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কমেছে। এর ফলে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে পহেলা বৈশাখে দেশজুড়ে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
 
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটের বিভিন্ন মৎস্য আড়তদার ও পাইকারদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে জেলেদের জালে সাগর ও নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে সে তুলনায় এ বছর ইলিশের সংখ্যা অনেক কম। আর এ কম সরবরাহের কারণেই ঘাটে আসা এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির নিচের ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ হাজার, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার এবং ছোট সাইজের ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। যা স্বাভাবিক দামের তুলনায় একটু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সাগর ও নদীতে মাছ ধরা শেষে ছোট বড় মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফেরেন জেলেরা। অপরদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিনের মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের লক্ষেও দ্রুত অনেকেই ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ঘাটে আসা এসব ট্রলারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ইলিশ। ফলে চাহিদার তুলনায় বিএফডিসি ঘাটে ইলিশ সরবরাহ কম থাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে দাম।
 
সাগরে মাছ শিকার শেষে ট্রলার নিয়ে ঘাটে আসা মো. সেলিম নামে এক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেমন দামে ইলিশ বিক্রি হবে তা মৎস্য আড়তদার এবং পাইকাররা ঠিক করেন। তবে আমরা গত বছর শীত মৌসুম থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সাগরে যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি ওই তুলনায় এ বছর মাছ অনেক কম। বিশেষ করে সাগরে ট্রলিং জাহাজের মাধ্যমে মাছ ধরা বৃদ্ধিতে প্রচুর পরিমাণ বাচ্চা ইলিশ তাদের জালে মারা পড়ছে। যার ফলে দিন দিন সাগরে ইলিশ কমতে শুরু করেছে।
 
শহিদ মোল্লা নামে স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে সাগরে ট্রলিং জাহাজসহ বিভিন্ন জেলেরা ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরেন। এতে অসংখ্য বাচ্চা ইলিশ মারা পড়ছে। ফলে সাগর ও নদীতে চাহিদার তুলনায় এখন কম ইলিশ ধরা পড়ছে। আর এ কারণেই ইলিশের দাম বেড়েছে।

স্থানীয় আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী জাহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দুই-তিন দিন ধরে কিছু ইলিশ ঘাটে এসেছে। ইলিশের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ইলিশের চাহিদা থাকায় এবং তুলনামূলক মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সাগরের ১ কেজি ওজনের ইলিশ মণ প্রতি ৯৬ থেকে ৯৭ হাজার এবং সগর মোহনায় নদীর ইলিশ ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
 
নিউ আল আমিন ফিস নামে এক মৎস্য আড়তের মালিক মো. শাহ আলম টিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রলিংসহ সকল প্রকার অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরাই হচ্ছে সাগরে ইলিশ কম থাকার একমাত্র কারণ। যে ইলিশের দাম ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হওয়ার কথা তা এখন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যে মাছ ২০ থেকে ২৫ হাজারে বিক্রি হওয়ার কথা তা এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তরিকুল ইসলাম সবুজ ফিশ নামে আরেকটি আড়তের মালিক মো. আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০১২ সাল থেকে মাছের আড়তের ব্যবসা শুরু করেছি। বছরের এই সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ থাকার কথা তা গত দুই বছর ধরেই নেই। যখন থেকে সাগরে ট্রলিং জাহাজে মাছ ধরা শুরু হয়েছে তখন থেকেই মাছ কমতে শুরু করেছে। বৈশাখ উপলক্ষ্যে ইলিশের চাহিদা আছে কিন্তু ঘাটে ইলিশ কম থাকায় অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

সাগর ও নদীতে ইলিশের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসির মৎস্য গবেষক বিপ্লব কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টিপাতের ওপরে ইলিশের ডিম দেওয়ার একটি প্রভাব থাকে। ভরা মৌসুমে যখন ইলিশ ডিম দেয় তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি ও পানির স্রোত না থাকায় ইলিশের ডিম দেওয়ার পরিমাণ কমে যায়। গত বছরের আগে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে ওই বছর ইলিশ কাঙ্খিত পরিমাণ ডিম দেয়নি।

তিনি বলেন, সাগর নদীতে যে পরিমাণ মাছ ধরার জাল ফেলার কথা তার থেকেও বেশি পরিমাণ জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা হচ্ছে। ফলে ছোট সাইজের ইলিশ আগেই ধরা পড়ার কারণে দিন দিন মা ইলিশের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের মোহনা অঞ্চলের নদীতে অবৈধ জাল বন্ধ এবং মা ইলিশের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা করতে পারলেই ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 


এমআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কোটি টাকার মালিক হয়েও বেকার যুবককে কেন বেছে নেবেন তানিয়া? Sep 14, 2025
img
নিউজিল্যান্ডের সফল কোচ এবার ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে! Sep 14, 2025
img
বাণিজ্য ঘাটতি কমলে শুল্ক কমানোর আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের Sep 14, 2025
img
নীরজ ঘায়ওয়ানের হোমবাউন্ড মুক্তি পাচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর Sep 14, 2025
img
পুরো নির্বাচনে প্রাপ্তি একটি ভোট, সেই ভোটারকে খুঁজছেন প্রার্থী রাকিব Sep 14, 2025
img
ঢাকা মেট্রোর দাপুটে জয়, বৃথা গেল সাব্বিরের ঝোড়ো ইনিংস Sep 14, 2025
img
মতিউর ও তার স্ত্রীর একদিনের রিমান্ড Sep 14, 2025
img
ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশসহ ৬ দেশ Sep 14, 2025
img
৬ মাসের মধ্যেই ক্ষমতা ছাড়বেন নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী Sep 14, 2025
img
বলিউড তারকাদের বিলাসী শখে ক্ষুব্ধ আমির খান Sep 14, 2025
img
বছরের শেষ রাতে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে কার্তিক-অনন্যা জুটি Sep 14, 2025
img
উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি নিজেও বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছি : অর্থ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
ঢাকায় শুরু হচ্ছে সার্ক দেশগুলোর পণ্য নিয়ে বৃহৎ বাণিজ্য মেলা Sep 14, 2025
img
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর Sep 14, 2025
img
এবার আইটেম গানে চমক দিলেন সামিরা খান মাহি! Sep 14, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, ৭ জনের মনোনয়ন ফরম গ্রহণ Sep 14, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৩ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৬৮৫ Sep 14, 2025
img
বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে তিস্তা ও দুধকুমার নদী, প্লাবিত হতে পারে উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল Sep 14, 2025
img
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সভাপতির আসনে সৌরভ গাঙ্গুলি! Sep 14, 2025
img
সাদিক কায়েমের ফেসবুকে সাইবার হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ Sep 14, 2025