ধর্ষণ থেকে বাঁচতে দোতলা থেকে লাফ

চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার সময় দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন এক কলেজ ছাত্রী। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওই কলেজছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

রোববার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার কলেজ ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

আসামিরা হলেন- যুগবানী সমাজকল্যাণ সংস্থা নামে একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তানজিরুল হাসান জীবন ও তার সহযোগী আফিয়া বেগম। এ ঘটনায় বুধবার আফিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অভিযুক্ত তানজিরুল হাসান জীবন

অভিযুক্ত তানজিরুল জেলার বাসাইল উপজেলার জশিহাটী গ্রামের বাসিন্দা এবং আফিয়া করটিয়া এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা বাজারে অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তানজিরুল রোববার সকালে সহকর্মী আফিয়াকে দিয়ে এক কলেজছাত্রীকে চাকরি দেওয়ার নাম করে তার কক্ষে ডেকে নেয়। ওই ছাত্রীটি আসার পর আফিয়া কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এ সুযোগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তানজিরুল। তখন ছাত্রীটি কক্ষ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পায়। পরে বারান্দার দরজা দিয়ে পাশের একটি ডোবায় লাফিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (২৮ মে) ওই ছাত্রী বাড়ি ফেরেন।

স্থানীয়রা জানায়, অভিযুক্ত তানজিরুল হাসান জীবন নিজেকে এশিয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে অফিসে নিয়ে এসে কুপ্রস্তাবসহ ধর্ষণের চেষ্টা করতেন। আর তাকে সহযোগিতা করতেন ওই অফিসের নারী কর্মী আফিয়া বেগম।

ভুক্তভোগী ওই কলেজ ছাত্রী বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে গাড়িতে দেখা হয় জীবনের সাথে। তখন তিনি আমার বিষয়ে জানতে চান। আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি তাকে ব্যাংক এশিয়া’র কর্মকর্তা পরিচয় দেন এবং ওই ব্যাংকে চাকরির জন্য লোক নেয়া হবে। আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলেন তিনি। গত রোববার ফোন করে তার এক নারী কর্মীকে পাঠালে তার সাথে আমি ওই অফিসে যাই। অফিসে যাওয়ার পর ওই নারী কর্মী বাইরে বের হয়ে যায়। এ সময় জীবন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে এখান থেকে বের হতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। পরে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন আমি বের হতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পাই। এ সময় পাশের আরেকটি দরজা খুলে দেখি বারান্দা। তখন কোন উপায় না দেখে আমি দোতলা থেকে লাফ দেই। এরপর আমি আর কিছু জানি না। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখি হাসপাতালে।

এই ছাত্রীর মা জানান, আমার মেয়েকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয়া হয়েছিল। পরে ধর্ষণ চেষ্টা করলে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠিন বিচার দাবি করেন তিনি।

মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. প্রত্যয় বড়ুয়া বলেন, মেয়েটির মেরুদণ্ডের একটি হাড় ফেটেছে এবং পা কেটে গেছে। তাকে দেড় মাসের বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে যুগবানী সমাজকল্যাণ সংস্থার টাঙ্গাইল হেড অফিসের জেনারেল ম্যানেজার আকতার হোসেন বলেন, এটা প্রেমঘটিত কারণে হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্টের অধিকার কোনও কর্মকর্তার নেই। তাই অভিযুক্ত ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তানজিরুলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মির্জাপুর থানার ওসি একেএম মিজানুল হক বলেন, এ ঘটনায় দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তানজিরুলের সহযোগী আফিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: