‘জংলি’ সিনেমা দেখে সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত দম্পতির

এবারের ঈদে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের চোখে কান্না ঝরিয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত ‘জংলি’ সিনেমা। যেখানে উঠে এসেছে বাবা-মেয়ের গল্প। বলা যায়, এক যুবকের বাবা হয়ে ওঠার গল্প।

জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। সিনেমার প্রথমার্ধে সিয়ামকে সেই চিরায়ত ‘চকলেট বয়’ লুকে দেখা গেলেও পরে তার লুক ও অভিনয় ছিল আগের কাজগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। পর্দায় এবার তিনি পাশের বাড়ির ছেলে নন, বরং বখে যাওয়া এক জংলি। পর্দায় তিনি সত্যিই জংলি হয়ে উঠেছিলেন।

এ সিনেমাতে সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা। অতঃপর সিয়াম সত্যিই সত্যিই তার বাবা হয়ে ওঠেন।

পর্দায় সিয়াম-নৈঋতার অভিনয় দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের এই গল্প যেন ঢাকার চাকুরিজীবী এক দম্পতিকে বেশিই ছুঁয়ে গেছে। সিয়ামের সিনেমা দেখেই সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ঘটনা খুলে বলা যাক, অদিতি ও আবির। দুজনই চাকুরিজীবী। বিয়ের পর কেটে গেছে অনেক বছর। কিন্তু সাংসারিক জীবনে এখনও সন্তানের মুখ দেখেননি।
সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রী মিলেই প্রেক্ষাগৃহে হাজির হয়েছিলেন সিয়ামের ‘জংলি’ সিনেমা দেখবেন বলে। সেই সিনেমা দেখার পরই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাচ্চা দত্তক নেবেন।

এ বিষয়ে আবির নামে ওই যুবক বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই দ্বিতীয়বার ‘জংলি’ দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম শুধু জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না। জন্ম না দিয়েও আদর্শ বাবা-মা হওয়া সম্ভব। সেটা ‘জংলি’ ছবিতে পরিচালক সাহেব দারুণভাবে উপলব্ধি করাতে পেরেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। নানাবিধ প্রতিকূলতা। সেটা সামাজিক কারণেও বলতে পারেন। কিন্তু এই ছবি দেখার পর আমরা উভয় সিদ্ধান্ত নিই। সমাজের কে কি বললো সেটা ভাবার দরকার নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃঢ়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বাচ্চা দত্তক নেব। ইতোমধ্যে একটি আশ্রমের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’

আবির যখন কথা বলছিলেন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার স্ত্রী অদিতি। তিনি বললেন, ‘এমন ছবি সমাজের সব বাবা-মায়েদের দেখা উচিত। যারা বাবা-মা হননি তাদের আরও বেশি দেখা দরকার। সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হওয়ার দারুণ এক লেসন রয়েছে জংলি সিনেমায়। আমরা যারা মেয়ে। তারা বাবাদের কাছে রাজকন্যা। সেই রাজকন্যাদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা কতটা থাকে। তা এই ছবিতে সিয়াম জন্মদাতা না বাবা হয়ে সেটা দেখিয়েছেন। ছবিটি দেখার পর আমরা জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। ব্যাড প্যারেন্টিং, শিশুদের জন্য গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের মতো বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ‘জংলি’ টিমের বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা।’

এই দম্পতি জানালেন, আমাদের সমাজে বাচ্চাদের নিয়ে কত কিছু ঘটে। অনেকে বাচ্চা জন্ম দিয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিয়ে যান। তারা কিভাবে বড় হয় সেটা খুবই অমানবিক। এই ছবিতে সেটাও দেখানো হয়েছে। তারা আহ্বান জানান, এমন ছবি আরও নির্মাণ হোক। মারামারির ছবির বাইরেও এমন ছবি নির্মাণ হলে কিছু মানুষের মাঝেও তো প্রভাব পড়বে। যে প্রভাব আমাদের সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

উল্লেখ্য, ঈদে মুক্তি পাওয়া সিয়াম আহমেদের এই ছবিতে তার বিপরীতে আছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী ও দীঘি। আরও আছেন দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপুসহ আরও অনেকে।

এফসি/টিএ 

Share this news on: