জলবায়ু সংকটে সমুদ্রের তাপপ্রবাহ তিন গুণ বেড়েছে : গবেষণা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু সংকটে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা তিন গুণ বেড়েছে। এতে তীব্র ঝড়ের সৃষ্টি হয় ফলে কেল্প বন এবং প্রবাল প্রাচীরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০০০ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপপ্রবাহের অর্ধেকই বৈশ্বিক তাপপ্রবাহ ছাড়া হত না, যা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে ঘটে। তাপপ্রবাহ দিন দিন আরো তীব্র হয়ে উঠছে।গড়ে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে উঠছে, কিছু জায়গায় অনেক বেশি উষ্ণ হচ্ছে।

এ গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী স্পেনের ম্যালোর্কার মেডিটেরেনিয়ান ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ড. মার্টা মার্কোস বলেন, ভূমধ্যসাগরে কিছু স্থানে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ রয়েছে যা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেশি। সাতার কাঁটতে গেলে মনে হয় পানি নয় যেন স্যুপ।
 
মার্কোস বলেন, উষ্ণ সমুদ্রের পানি নিচের তৃণভূমির মতো বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করার পাশাপাশি, উপকূল এবং অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের মানুষের উপর প্রভাব ফেলে।

এর একটি ভয়াবহ উদাহরণ হলো, ২০২৩ সালে লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যার ফলে তীব্র বৃষ্টিপাত হয়। এতে ১১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। বৈশ্বিক উত্তাপের ফলে ভূমধ্যসাগরের তাপমাত্রা ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে এটি ৫০ গুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এর ফলে জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং বৃষ্টিপাতও বেশি হয়েছিল।

মার্কোস বলেন আরো বলেন, এর একমাত্র সমাধান হল জীবাশ্ম জ্বালানি কম পোড়ানো। অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রে সঞ্চিত থাকে। যদি বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করা বন্ধ হয়, তাহলে সমুদ্রও উষ্ণ হওয়া বন্ধ হবে।

সাম্প্রতিক সমুদ্রের তাপপ্রবাহের মধ্যে ২০১৪-১৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা রয়েছে যার ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর ব্যাপক মৃত্যু ঘটে। ২০১৫-১৬ সালে তাসমান সাগরে তীব্র তাপপ্রবাহ আঘাত হানে এবং ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য এবং ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড করে।

এরপর বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালে সতর্ক করেছিলেন যে সমুদ্রের তাপপ্রবাহ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বন্যপ্রাণীর বিশাল এলাকা পুড়িয়ে ফেলার মতো সামুদ্রিক প্রাণীর প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।
 
যুক্তরাজ্যের জাতীয় সমুদ্রবিজ্ঞান কেন্দ্রের ড. জো জ্যাকবস বলেন, ‘সমুদ্রের তাপপ্রবাহ দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া মাছ, জলজ প্রাণী এবং পর্যটন শিল্পের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যার কারণে লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হয়।

প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে প্রকাশিত এই গবেষণাটি ১৯৪০ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার মডেল তৈরি করছে যা জলবায়ু সংকটের ফলে সৃষ্ট উত্তাপ দূর করছে। এরপর তারা সমুদ্রের প্রকৃত পরিমাপের সাথে তুলনা করে ওই মডেলে দেখায়, কীভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৪০ এর দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠে বছরে প্রায় ১৫ দিন বেশি তাপ ছিল। কিন্তু এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গড়ে বছরে প্রায় ৫০ দিনে পৌঁছেছে। ভারত মহাসাগর, গ্রীষ্মমন্ডলীয় আটলান্টিক এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরসহ কিছু অঞ্চলে বছরে ৮০ দিনের মতোও তাপপ্রবাহ থাকে।

গবেষণা দলের আরেকজন রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিয়াংবো ফেং বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ তীব্র হয়ে উঠবে। মানুষের কর্মকাণ্ড আমাদের মহাসাগরগুলোকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করছে। সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি জলবায়ু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’



এমআর/টিএ



Share this news on: