বিটিআরসি লাইসেন্সের জন্য স্টারলিংকের আবেদন

দেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালুর উদ্যোগ আরও এক ধাপ এগিয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর কাছে লাইসেন্সের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “তারা গত সপ্তাহেই আবেদন করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের আবেদন প্রক্রিয়াজাত করা হবে।”

এর আগে গত ২৯ মার্চ স্টারলিংক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর অনুমোদন পায়। এখন শুধুমাত্র বিটিআরসির অনুমোদন পেলেই কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

লাইসেন্স পেলে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (NGSO) নীতিমালার আওতায় অনুমোদন পাওয়া প্রথম প্রতিষ্ঠান হবে স্টারলিংক। এ নীতিমালায় আবেদন ফি পাঁচ লাখ টাকা, লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ডলার এবং বার্ষিক ফি ৩০ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি টার্মিনালের জন্য বার্ষিক ফি ধরা হয়েছে এক ডলার, তবে শুধুমাত্র আইওটি সেবার ক্ষেত্রে টার্মিনাল ফি প্রযোজ্য হবে না।

বিশেষ ছাড়ের সুযোগও রয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আইআইজি ব্যবহার করে বা দেশীয় স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেয়, তবে সব ফি থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় পাবে।

আয়ের ক্ষেত্রেও দুই বছরের জন্য করমুক্ত সুবিধা থাকছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম বছর পর্যন্ত মোট আয়ের ৩% এবং ষষ্ঠ বছর থেকে ৫.৫% সরকারকে দিতে হবে।

স্টারলিংককে দ্রুত কার্যক্রম শুরুর সুযোগ দিতে ২৫ মার্চ একটি নির্দেশনা দেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি যেন ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, বিশ্বব্যাপী মোট ছয়টির বেশি স্যাটেলাইট কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত স্টারলিংকই একমাত্র আনুষ্ঠানিক আবেদনকারী।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সাল থেকেই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করে আসছে। গত বছর বিটিআরসি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে, যারা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে।

চূড়ান্ত নীতিমালায় রয়েছে — সেবা দিতে হলে ইন্টারনেট ট্রাফিক স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে এবং ডেটা পরিবহনের জন্য অবশ্যই একটি আইআইজিতে সংযুক্ত হতে হবে।

বর্তমান সরকার ইন্টারনেট সংযোগ হঠাৎ বন্ধের সুযোগ কমাতে নীতিগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, সরকার চারটি উদ্যোগ নিয়েছে—এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, ইন্টারনেট বন্ধের অনুমতিপত্র বাতিল, এনজিএসও লাইসেন্স থেকে সংশ্লিষ্ট ধারা বাদ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় টেলিকম আইন সংশোধন।

টেলিকম বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসেইন মনে করেন, “বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগমন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বড় মাইলফলক। তবে স্থানীয় ব্রডব্যান্ডের তুলনায় স্টারলিংক কতটা সাশ্রয়ী হবে, সেটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।”


এসএস/এসএন


Share this news on: