ইরানের পর এবার পাকিস্তানকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে ওয়াশিংটনে। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, কট্টরপন্থীদের হাতে কখনওই পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না। যদিও তিনি সরাসরি কোনও দেশের নাম নেননি, বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ট্রাম্পের ইঙ্গিত ছিল শুধুমাত্র ইরানের দিকে নয়, পাকিস্তানের দিকেও।
ইরানকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের চুক্তিতে রাজি করানোর জন্য ইতিমধ্যেই তেহরানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রেক্ষিতেই পাকিস্তানের পরমাণু ভান্ডার নিয়ে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র ঘিরে মার্কিন উদ্বেগ কয়েকগুণ বেড়েছে। হামাস, হিজবুল্লা বা হুথিদের মতো গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলির সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতাও আমেরিকার দৃষ্টিতে বিপজ্জনক।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সভায় হামাসের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যেখানে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য উস্কানি দেওয়া হয়। এরই জেরে গাজায় হামলা জোরদার করে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। ট্রাম্প আবার গাজাকে প্যালেস্টাইন মুক্ত করে নতুন শহর গড়ার পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছেন, যা ইজরায়েলকে পূর্ণ সমর্থনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, যদি চরমপন্থী সংগঠনগুলি পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থন পায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।
পেন্টাগনের সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৭ সাল থেকেই পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার নিয়ে পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে তারা। ২০১৩ সালে ওভাল অফিসে পাঠানো এক গোপন রিপোর্টে এই বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার উল্লেখও ছিল। তাদের দাবি, পাকিস্তানের অস্ত্রভান্ডারের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে, এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত দখল নেওয়া সম্ভব।
‘ওয়ার অন দ্য রক্স’-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে ১৭০টির বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা ২০০-৩০০ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম রাওয়ালপিন্ডির সেনাবাহিনী।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা বালোচিস্তান ও খাইবার-পাখতুনখোয়ার মতো অঞ্চল ঘিরে। বালোচ বিদ্রোহীরা এবং টিটিপি-র মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো এই এলাকাগুলিতে সক্রিয়, আর পাকিস্তান দাবি করছে, আফগানিস্তান-শাসিত তালিবান পরোক্ষে টিটিপিকে মদত দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার কৌশল হয়ে উঠছে আরও আগ্রাসী। অতীতে মধুর সম্পর্ক থাকলেও, বর্তমানে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ইসলামাবাদকে আর আগের মতো ভরসা করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই এই টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট।
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের ভবিষ্যৎ এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয়। আর ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য তাতে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।
আরআর/এসএন