ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন বলেছেন, বর্তমানে কোম্পানির যে ব্যবস্থাপনা পরিষদ রয়েছে, তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে, যদি আমাকে বর্তমানে পরিচালনা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত (এমডি) করা হয় তাহলে, পরের মাস থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের টাকা ফেরত পাবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে তার নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল আমীন এ কথা বলেন।
রফিকুল আমীন বলেন, ‘ডেসটিনির কাছে যে বিল পাবে, যে টাকা পাবে, বর্তমান ম্যানেজমেন্টকেই দিতে হবে, রফিকুল আমীনকে যদি ফেরত দিতে হয়, রফিকুল আমীনকে আগের বোর্ডে নিয়ে আসতে হবে। এমডির পজিশনে বসাতে হবে। ওয়াদা করতেছি আমাকে এমডি পজিশনে দেওয়া এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার এক মাস পরে থেকে আমি টাকা দেওয়া শুরু করব।’ তবে কীভাবে টাকা দেবেন, তা ব্যাখ্যা করেননি।
উল্লেখ্য, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। এই দুটি মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে রফিকুল আমীন এই মামলাগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হন এবং কারাভোগ করেন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রফিকুল আমীন আরও বলেন, আমাকে যখন সাজা দেওয়া হয়, তার আগেই আমি আদালতকে বলেছিলাম, মাননীয় আদালত আমাকে যে শাস্তিই দিন না কেন, আমাকে যেন পরিচালনা পরিষদে থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আমাকে নির্দেশ দিন, যাতে আমি সেই টাকা ফেরত দিতে পারি। তবে আদালত আমাকে সেই নির্দেশ দেননি, কারণ তারা জানেন আমাকে নির্দেশ দিলে পরিচালনা পরিষদে রাখতে হবে। আমাকে পরিচালনা পরিষদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ১৭ জনকে আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ডেসটিনি ২০০০-এর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বর্তমান ব্যবস্থাপনা বোর্ড তাঁকে ডেসটিনির পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে না বলে অভিযোগ করেন রফিকুল আমীন। তিনি দাবি করেন, একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে বোর্ডে নেওয়া হচ্ছে না। তার অভিযোগ, বিদেশে পলাতক তিনজন পরিচালক এই ষড়যন্ত্রের মূলহোতা এবং তাঁরাই কোম্পানির সমস্ত অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড ২০০১ সালের ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এবং প্রথম এক দশক সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে। তবে বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে পরবর্তী এক দশক ধরে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এক সময় দেশজুড়ে কোম্পানিটির প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহক ছিল।
এদিকে ডেসটিনির রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করলো রাজনৈতিক নতুন দল ‘আ-আম জনতা পার্টি। বাংলাদেশের জনগণের সাধারণ অভিপ্রায়কে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলা এ দলের লক্ষ্য।
দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছরেও দেশের মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের সাথে লড়াই করে চলেছে, তাই দেশের মানুষকে এক হয়ে স্বৈরাচার বিদায় করতে হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চায় বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি।
এমআর/টিএ