'যারা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন, তারা তো এলিয়েন'

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের ‘এলিয়েন বা অন্য গ্রহের মানুষ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে যে দল (এনসিপি) তাদের ক্ষমতা ‘চিরস্থায়ী করতে সংস্কার চালাচ্ছে’।“ফ্যাসিবাদের পতনে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছে। নব্য ফ্যাসিবাদ ও তার দোসররা সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”

রোববার দুপুরে ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের বর্ধিত সভার দ্বিতীয় দিনে গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এসব কথা বলেন।

প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ইতোমধ্যে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ উদ্যোগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিকে রাখা হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।

কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “সরকার দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে, এটা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারাই প্রয়োজন মত সংস্কার করবেন।

“এখন যারা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন, তারা তো এলিয়েন। তারা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন।”

দেশ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এই দেশের মঙ্গল হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে, গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। গ্রহণযোগ্যতা না পেলে দেশে বিনিয়োগ হবে না, কর্মসংস্থান হবে না, শুধু বেকারত্ব বাড়বে।

“আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলেও কেউ এখানে বিনিয়োগ করবে না। দেশের কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।”

শুধু রেমিটেন্সের ওপর ভর করে একটা দেশ চলতে পারে না মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, “যারা আলুর দাম কম দেখে খুশি হচ্ছেন, তারা কৃষকের কান্না দেখেননি।”

“এখন রেমিটেন্স আসছে, রেমিটেন্স দিয়ে একটা দেশ চলতে পারে না। দেশের মানুষের হাতে টাকা নেই, সরকারের হাতেও টাকা নেই। মানুষের ব্যবসা নেই, ট্যাক্স দেবে কে? মানুষ ট্যাক্স দিতে পারছে না তাই সরকার মালামালও আমদানি করতে পারছে না।”

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’ থাকার কথা তুলে ধরে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, “দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হলে রাস্তায়-রাস্তায় লুটতরাজ চলবে। আপনি বেতন দিতে না পারলে পুলিশ অথবা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের কথা শুনবেন কেন?

“শান্তির জন্য অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি বৈধ সরকার আনতে হবে।”

বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দিষ্ট দলের কথামত চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পুলিশ কিছুটা বিএনপি, কিছুটা জামায়াতের কথা শুনে হা-হুতাশ করছে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন দিলে সবাই পিটিয়ে-পাটিয়ে নির্বাচন করবে। এমন নির্বাচন বৈধতা পাবে না।”
জি এম কাদের অভিযোগ করেন, “সরকার একটা দল গঠন করেছে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সংস্কার চালাচ্ছে। যেনতেনভাবে তাদের নির্বাচনে পাশ করাবেন।”

সেই নির্বাচন হাসিনার নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে কি না প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা সব কিছু হাতে নিয়েও থাকতে পারলেন না, আপনারা কত দিন থাকতে পারবেন? যাদের নির্বাচন থেকে বাদ দিবেন তারা ঘরে বসে আঙ্গুল চুষবে?”

‘জাতি এক কঠিন সময় পার করছে’ মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের মানুষ এত আতঙ্ক ও হতাশাগ্রস্থ হয়নি কখনো।”
বর্তমান সরকারও শেখ হাসিনার মত একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে অভিযোগ করেন তিনি।


এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী Apr 21, 2025
img
ইসরায়েলি জনগণের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান, নেতানিয়াহুর যুদ্ধপিয়াসী মনোভাব Apr 21, 2025
img
এবার চীনে আম পাঠাবে বাংলাদেশ, আগামী বছর কাঁঠাল Apr 21, 2025
img
রাজধানীর বহুতল ভবনের টয়লেট থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার Apr 21, 2025
img
ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে এশীয় শিক্ষার্থীদের মামলা Apr 21, 2025
img
ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়ল ভুয়া পুলিশ Apr 21, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে ডাস্টবিনে পাওয়া নবজাতক পেলো মায়ের কোল Apr 21, 2025
img
দুর্নীতি মামলায় নিক্সনের স্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ Apr 21, 2025
img
অসুস্থতাজনিত কারণে ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু, নেই আঘাতের চিহ্ন Apr 21, 2025
img
শেখ হাসিনার পক্ষে ববি শিক্ষকদের গোপন বৈঠক, ভিডিও ভাইরাল Apr 21, 2025