বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভিক্ষের মুখে অনেক বাসিন্দা এখন বেঁচে থাকার জন্য সামুদ্রিক কচ্ছপ খেতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের একতরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরু হলে ত্রাণ সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে করে গাজার জনজীবনে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) প্রকাশিত আরব নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবার না পেয়ে অনেক পরিবার এখন বিকল্প প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ রান্না করে খাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আগে কখনো কচ্ছপ দেখেননি, এমনকি ভয় পেতেন—তবুও ক্ষুধার তীব্রতায় বাধ্য হয়ে তারা এই নিষিদ্ধ প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।

গাজাবাসী মাজিদা কানান, যিনি এখন খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, রান্নার হাঁড়িতে কচ্ছপের মাংস ফোটাতে ফোটাতে বলেন, বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা বলেছিলাম, এটা বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খায়নি।

৬১ বছর বয়সী মাজিদা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই তৃতীয়বার তিনি কচ্ছপ রান্না করছেন। বাজারে কিছুই নেই, বিশেষ করে মাংস তো নেই-ই। তিনি বলেন, দুই ব্যাগ ছোট সবজি কিনতেও ৮০ শেকেল (২২ ডলার) খরচ করতে হয়।

সাধারণত কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে সেদ্ধ করে তা পেঁয়াজ, টমেটো, গোলমরিচ ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ও বিপন্ন হিসেবে পরিচিত। তবুও গাজার উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়লে এসব কচ্ছপকেই বর্তমানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এক জেলে, আবদেল হালিম কানান বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার কথা ভাবিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের এতই সংকট হয়েছে যে আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা ইসলামী নিয়ম মেনেই কচ্ছপ জবাই করছি। যদি দুর্ভিক্ষ না হতো, তাহলে কচ্ছপ ছেড়ে দিতাম। তবে এখন আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।

বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, এখানে দুর্ভিক্ষ এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ, বাজারে পণ্যশূন্যতা এবং ক্রমবর্ধমান দামে সাধারণ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে কেউ কেউ পশুখাদ্য, ঘাস, এমনকি পচা পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন।

এই অবস্থায় কচ্ছপের মতো একটি বিপন্ন প্রজাতি হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ আশার উৎস—একটি প্রোটিনের বিকল্প, যা তারা কখনো ভাবেননি যে একদিন খেতে হবে। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, জীবনধারণের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃশ্য এখন গাজার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ছে।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

তিন গুণেরও বেশি খরচ কমানো সম্ভব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে Apr 21, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার চারদিনের কাতার সফর শুরু আজ Apr 21, 2025
লুট'পাট করে আ.লীগ নেতারা পালালেও ঋণ চেপেছে জনগনের ঘাড়ে Apr 21, 2025
মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটিতে বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব Apr 21, 2025
'পালাবো না' বলেও রেড নোটিশের মুখে ওবায়দুল কাদের Apr 21, 2025
জাহিদুলকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতাকে দায়ী করলেন ছাত্রদল সভাপতি Apr 21, 2025
আইএমএফ’র টাকা নিয়ে যা বললেন গভর্নর Apr 21, 2025
এআই দিয়ে নারী রাজনীতিবিদদের অসম্মানিত করার আশঙ্কা রুমিন ফারহানার Apr 21, 2025
বিএনপি-আওয়ামী লীগ একই, এরা তরুণদের বাঁচতে দেবে না: ফরহাদ মজহার Apr 21, 2025
img
বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে রেল সংযোগ প্রকল্প স্থগিত করল ভারত Apr 21, 2025