অরিন্দমের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন টলিউড অভিনেত্রীরা: কত টাকা পেয়েছেন তিনি?

কর্তব্যরত অবস্থায় হাসপাতালের ভিতরে মৃত্যু হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয় তাঁকে। খোদ কলকাতার প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল শহর। গত বছর অগস্ট মাস থেকে পথে-প্রতিবাদে দেখা গিয়েছে রুপালি দুনিয়ার তারকাদেরও। তা নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। 

সম্প্রতি আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ অবস্থান নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, টলি অভিনেত্রীরা নাকি আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ হয়েছেন নতুন মোবাইল আর অর্থের বিনিময়ে! পরিচালকের দাবি, এই খবর নাকি টলিউডের সকলেই জানেন, খোলা খাতার মতো। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলছেন না। তাঁর দাবি, উপঢৌকন নেওয়ার তালিকায় নাকি অভিনেত্রীদের সংখ্যাই বেশি। এমনকি তাঁদের সঙ্গীরাই নাকি এ সব কথা সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন।

পরিচালকের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত অভিনেত্রীরা। অনেকে সমাজমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। সেই দলে রয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী, রূপাঞ্জনা মিত্র-সহ অনেকেই।

ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চৈতি ঘোষাল, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত, তানিকা বসু। এঁরা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ ভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

চার অভিনেত্রীই তুলেছেন পাল্টা প্রশ্ন, ‘কারা অর্থের বিনিময়ে প্রতিবাদ করলেন? তাঁদের নাম কি অরিন্দম প্রকাশ্যে আনবেন?’ শুধু তা-ই নয়, অভিনেত্রীরাও জানতে চান, আন্দোলনের বিরুদ্ধে এমন কথা বলার বিনিময়ে কি অরিন্দম কোনও অর্থ বা সুবিধা লাভ করেছেন?

২০২৪ সালের ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক পিজিটি খুন হন হাসপাতালের ভিতরেই। এর পর ১৪ অগস্ট রাতদখলের কর্মসূচি হয়। প্রতিবাদে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। সারা রাত পথে ছিলেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার তারকারাও। সে দিন দক্ষিণ কলকাতার একটি জমায়েতে দেখা গিয়েছিল সস্ত্রীক অরিন্দম শীলকেও। মোমবাতি হাতে তাঁর মিছিলে পা মেলানোর ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাঁকে। কারণ, পরিচালকের বিরুদ্ধেই যে অভিনেত্রীদের যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ! তার পর আর এক দিনও তাঁকে প্রতিবাদ মিছিলে দেখা যায়নি।

অরিন্দমের বিরুদ্ধে পাল্টা বক্তব্য রাখার সময় সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন প্রত্যেকে। চৈতি যেমন বলেছেন, “যত দিন প্রতিবাদ চলেছে আমরা শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে দৌড়ে বেড়িয়েছি। কেবল ন্যায়বিচারের জন্য। আমাদের সেই অনুভূতি নিয়ে কে মুখ খুলেছেন? পরিচালক অরিন্দম শীল! যাঁর মাথায় নাকি একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ।” পরিচালক-অভিনেত্রীর দাবি, অরিন্দম ফুরিয়ে গিয়েছেন। হাতে হয়তো কোনও কাজ নেই। কিন্তু প্রচারে থাকতেই হবে। ফলে, প্রমাণ ছাড়াই যা মনে হচ্ছে, তা-ই বলে দিচ্ছেন।

প্রায় একই কথা বলেছেন বিদীপ্তাও। তাঁর কথায়, “শুনে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না! তবে, অরিন্দমদার এই কথা গায়েও মাখছি না। বরাবর যেটা সঠিক মনে হয়েছে সেটাই করেছি। এ বারেও সেটাই করছি। আন্দোলন সাময়িক স্থগিত। তার মানে এটা নয়, সব ভুলে গিয়েছি। আমরা আরজি কর-আন্দোলনে যুক্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।” অভিনেত্রী এ-ও জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে ফের পথে নামবেন। কোনও কটাক্ষ তাঁকে থামাতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিদীপ্তার পাল্টা ব্যঙ্গ, “এ ভাবে টাকা নিলে তো অরিন্দম যে অভিজাত আবাসনে থাকেন তার পাশের ফ্ল্যাটটি আমার হত।”

পারিবারিক সূত্রে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তর ‘দাদা’ হন অরিন্দম। এ দিন সে কথা মনে করে হতাশা ব্যক্ত করেন অভিনেত্রী। দেবলীনার কথায়, “দাদার কারণে এই নিয়ে দু’বার আমার চোখের জল পড়ল। অরিন্দমদার বোন বলে ইন্ডাস্ট্রিতে একটা সময় যথেষ্ট কদর পেতাম। আমার পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে ওঁর অবদানও রয়েছে।” তাঁর দাবি, অরিন্দমের স্বভাব সম্বন্ধে তিনি প্রথম জানতে পারেন ‘এক পলকে একটু দেখা’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময়। ধারাবাহিকের নায়িকা প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, পরিচালক তাঁর সঙ্গে অনৈতিক আচরণ করেছেন। সে দিনও দেবলীনার চোখে জল এসেছিল। অভিনেত্রীর কথায়, “আবারও চোখ ভিজল অরিন্দমদার কথা শুনে। না, উনি কটাক্ষ করেছেন বলে নয়। এ সব আর পাত্তা দিই না।

খারাপ লাগল এই ভেবে, কথাটা কে বলছেন! তিনি নিজেই এত অপ্রাসঙ্গিক যে তিনিই আবার অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন!” দেবলীনার কথায়, “আমার প্রশ্ন, আন্দোলন-বিরোধী কথা বলার জন্যও কি অর্থ বা সুবিধা পাওয়া যায়।”

অরিন্দমের অভিযোগে কান দিতে নারাজ আরজি কর-কাণ্ডের আরও এক প্রতিবাদী মুখ তানিকা। এ দিন তাঁর ঘুম ভাঙে এই খবর শুনে। বিরক্তি মাখানো গলায় তিনি সাফ বলেন, “অরিন্দম শীলের মতো পরিচালকের বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করতেই রাজি নই। করলে ওঁকে অযথা পাত্তা দেওয়া হবে।”

 আরএম/টিএ   

Share this news on:

সর্বশেষ