নাগেশ্বরীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগে চারজন ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নাগেশ্বরী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ইসরাইল।
বালু ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে প্রভাব দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়ার তদবিরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাড়া না দিয়ে জেল দেওয়ায় মূলত ক্ষেপে যান সাবেক এ কাউন্সিলর। এরপর তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, ‘সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর দুর্নীতিগ্রস্ত বদমেজাজি নাগেশ্বরী উপজেলার এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এরপর থেকে আওয়ামী নেতাদের সাথে আশরাফুল ইসলাম ইসরাইলের বেশি কিছু ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এতে অনেকে মন্তব্য করছেন, ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছের মানুষ ইসরাইল এখন দল পাল্টিয়ে অন্যকে ফ্যাসিস্ট বলে বেড়াচ্ছেন। চোরকে পিটিয়ে হত্যা মামলার আসামি ইসরাইল মামলা থেকে বাঁচতে একটি দলে ভীড়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরী পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বাগডাঙ্গা বিলে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। অভিযোগ পেয়ে ২০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় অভিযান চালায় নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে বালু ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম (৩৪), আলমগীর হোসেনকে (৩৭) তিন দিন আব্দুল লতিফ (৩৮) ও মনিরুজ্জামানকে (৪০) বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন অপরাধে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় বালু তোলার পাইপ ভেঙে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, বালু ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর ভ্রাম্যমান আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। সুযোগ না পেয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। পোস্টে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বদমেজাজি বলে উল্লেখ করেন। এ কর্মকর্তার অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ বিচারের দাবি করেন পোস্টে।
এদিকে, ওই পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন ‘অবৈধ বালু তোলা ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যদি অপরাধ হয়, তবে আমাকে কালই প্রত্যাহার করুন। গরিবের জমি রক্ষায় পাশে দাঁড়ানো যদি দোষ হয়, আমাকেও দোষী মানুন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি আমি বদমেজাজি হই, তবে বিচার করুন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি পোস্ট নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে লিখেছেন একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করেও সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ইসরাইলকে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে নাগেশ্বরী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে নদীর ওইপাড়ে উনি লোকজন জড়ো করেছিলেন। লোক পাঠিয়ে আমাকে চলে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি হাতে নাতে চারটি বালু উত্তোলনের ড্রেজার পাওয়ায় আদালত বসিয়ে রায় দিয়েছি। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
আরএ/টিএ