বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষিত বেকার ভাতা চালু করবে: তারেক রহমান

দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য বিএনপি বেকার ভাতা চালুর বিষয়ে ভাবছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেটা চেষ্টা করছি, যারা চাকরি পাননি, তাদের জন্য বেকার ভাতার ব্যবস্থা করার। এটা এক বছর পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে সরকার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা করবে। শিক্ষিত বেকাররাও তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবেন।’

বুধবার রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর জেলা (বিএনপির সাংগঠনিক জেলা) নিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির ৩১ দফা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এমন ভাবনার কথা জানান।

বিগত সরকারের আমলে সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে দলীয়করণ হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতৃত্ব ছিল, তরুণ সহকর্মী ছিলেন, তাদের অনেকেরই আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে। এটার ভুক্তভোগী শুধু ছাত্রদল নয়, এর বাইরে অনেক মানুষ আছেন; যারা স্বৈরাচারের রাজনীতি সমর্থন করতেন না। কিন্তু সরকারের পক্ষে না থাকায় তাদেরও চাকরি খেয়েছে বা চাকরি দেয়নি। এ বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন। মানুষ যেন দুবেলা দুমুঠো মাছ-ভাত খেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারে, এটাই আমরা চাই। আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা যেন কর্মময় সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে, সেভাবেই আমরা কর্মসংস্থান করতে চাই।’ বিএনপি সরকার গঠন করলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা চালু করা হবে কি না, তারেক রহমানের কাছে এমন প্রশ্ন করেন নীলফামারী জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সোহেল পারভেজ। জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ কোনো ছোট দেশ নয়, বড় দেশ। আমার ধারণা, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কোনোক্রমেই ২০ কোটির কম নয়।২০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে বিরাট বাজেট প্রয়োজন।’

বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামোর ৩১ দফার সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ-সদস্য ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার কথা বলা হয়েছে। এটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, জানতে চান মহিলা দলের একজন নেত্রী। জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখন উনি অনেক পদেক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের নারীর ক্ষমতায়ন করা।’

তিনি বলেন, ‘সংসদে নারীদের জন্য যে ৫০ আসন আছে, সেগুলো বৃদ্ধি করা উচিত বলে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা দলের থেকে প্রস্তাব দিয়েছি, ৫০টিকে বৃদ্ধি করে ১০০টিতে নিয়ে যেতে চাই। এটি আলোচনার বিষয়, যে গণতান্ত্রিক দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলাম, আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করব। এটি নির্বাচিত সংসদ যেদিন বসবে, সেদিন থেকে হবে নাকি আলোচনার ভিত্তিতে-এ বিষয়ে বিল পাশ হবে, সেটা আমরা বসে ঠিক করব।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘উত্তরের তিন কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য তিস্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে এটিকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। নানা কল্পকাহিনি শোনানো হয়েছে। কিন্তু কোনো বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার ফলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিবর্তন হয়নি। এবার আমরা তিস্তাপারের মানুষের ভাগ্য নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে যেভাবে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মানুষের উপকার হবে, সেটাই করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৭ বছরে বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়নি। জুলুম হয়নি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা গুম-খুনের ভয়ে আতঙ্কে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। অনেক সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। আমাদের কিন্তু সেই স্বৈরাচারের জুলুমের ক্ষত বুকে রয়েছে। প্রতিশোধ বা জুলুম করে জবাব দিতে চাই না। আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর প্রতিশোধ নিতে চাই।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চলছে। একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ধীরে ধীরে বিএনপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সঙ্গে আরও কিছু প্রতিপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। এ বিষয়ে ৮ মাস আগেই নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছিলাম। এসব প্রোপাগান্ডা মোকাবিলা করার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে। তবে সবকিছুই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলা করতে হবে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন পুতুল, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ।

এমআর/টিএ


Share this news on: