১৮’র নিচে ইনস্টা অ্যাকাউন্টে এআই নজর, শিশুদের নিরাপত্তায় মেটার উদ্যোগ

ডিজিটাল জগতে শিশু-কিশোরদের অতিরিক্ত আসক্তি এখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই এই প্রবণতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শিশুদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে, পড়ালেখায় মনোযোগ হারাচ্ছে এবং মানসিক সমস্যা বাড়ছে।

এই বাস্তবতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা শিশুদের সুরক্ষায় বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। এখন থেকে ১৮ বছরের কম বয়সীরা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তা যাচাই করা হবে। বয়স গোপন করেও অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করলে তা শনাক্ত করে বাতিল করে দেবে এআই অ্যালগরিদম।

বিশেষ করে দেখা গেছে, অনেক শিশুর নামেই ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। সেখানে নিয়মিত আপলোড হচ্ছে রিল ভিডিও, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা ও পারিবারিক মুহূর্ত। কিন্তু এর বিপরীতে ছোটরা এখন আর মাঠে খেলতে যেতে চায় না—পুরো সময় কাটে মোবাইলের পর্দায়। এমনই পরিস্থিতিতে ছোটরাও জড়িয়ে পড়ছে ডার্ক ওয়েব ও সাইবার অপরাধের জালে।

এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে নতুন ‘টিন অ্যাকাউন্ট’ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র অল্পবয়সীদের জন্য তৈরি এই অ্যাকাউন্টে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট থাকবে না। এমনকি অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে অভিভাবকের অনুমতিও লাগবে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অভিভাবকরা সন্তানের অনলাইন কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন—কে বন্ধু হচ্ছে, কী শেয়ার করছে, সবকিছুর আপডেট তাদের কাছে পৌঁছাবে।

মেটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। শিশু-কিশোররা যেন অনলাইনে বেহিসেবি সময় না কাটায়, সেজন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, অন্তত ১৭ শতাংশ শিশু মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ফলে পড়াশোনায় মন বসছে না। ৪১ শতাংশ শিশু বাস্তব বন্ধুদের চেয়ে ভার্চুয়াল বন্ধুত্বেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে চোখের সমস্যা, ঘুমের অভাব, মনঃসংযোগের ঘাটতি এবং বিষণ্নতার মতো সমস্যা বাড়ছে। এই প্রবণতা এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভবিষ্যতে তা বড় সামাজিক সংকটে পরিণত হতে পারে।

মেটার এই উদ্যোগ প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে শিশুদের মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষার দিক থেকে ইতিবাচক এক প্রয়াস বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরএ/টিএ

Share this news on: