গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের গ্রুপের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভারত জুড়ে শোক এবং ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় তুলছে দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদরা। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা।
এই ঘটনার পর পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির সাবেক হিন্দু ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘যদি পাকিস্তানের কোনো ভূমিকা না থাকে, তবে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই হামলার নিন্দা করেননি কেন? কেন হঠাৎ করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হাই অ্যালার্টে চলে গেল? কারণ তোমরা জানো, সত্যিটা কী। তোমরা জঙ্গিদের লালন-পালন করো। লজ্জা হওয়া উচিত তোমাদের।’
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকার টুইটের পর দেশটির সাধরণ মানুষ ও সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন দানিশের ওপর। তার টুইটের এক সাংবাদিক কানেরিয়ার জাতিগত পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করেন।
তার বিপরীতে দানিশ কড়া জবাব দিয়ে লেখেন, ‘পাকিস্তানের মানুষ শান্তি চায়, এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন যারা শান্তির জন্য দাঁড়াবে। আমি পাকিস্তানে হিন্দু হওয়ার কারণে বারবার টার্গেট হয়েছি। আমাকেও তেমনভাবেই আলাদা করে দেখা হয়েছে, যেমনটা আজ পহেলগামের নিহতদের সঙ্গে হয়েছে।’
পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এমন দুইজন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা ধর্মে হিন্দু। তাদের মধ্যে একজন অনিল দলপত ও অন্যজন হলেন দানিশ কানেরিয়া। আকরাম, ইউনুসদের সময়ে দলের অন্যতম স্পিনার ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের হয়ে ৬১টি টেস্টে পেয়েছেন ২৬১ উইকেট। ১৮ টি একদিনের ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১৫।
এদিকে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় ভারতের সাবেক ক্রিকেটারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরাট কোহলি লেখেন, ‘এই কাপুরুষোচিত হামলার দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। ন্যায়বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিত।’ জাতীয় দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর তার প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘নিহতদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি। যারা এই হামলার পিছনে রয়েছে, তারা শাস্তি পাবে। ভারত এর জবাব দেবে।’
কাশ্মীরের এই ঘটনার প্রভাব যে ক্রিকেটের মাঠেও প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। পাকিস্তানের মাটিতে ভারত যেয়ে খেলে না ২০০৮ সাল থেকে, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজও হয় না ২০১২ সালের পর থেকে। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট মাঠের লড়াইটা ক্রিকেট প্রেমীরা এতদিন আইসিসির ইভেন্টেই দেখতো।
পহেলগামে পর্যটকদের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ভবিষ্যৎ না খেলার কঠর বার্তা দিয়েছে বিসিসিআই। একই সঙ্গে আইসিসি ইভেন্টেও পাকিস্তানের সঙ্গে না খেলার পথেই হাটতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড!
এসএম/টিএ