বিসিএসের সিলেবাস পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। ৪৯তম থেকে এই পরিবর্তন হতে পারে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিভিল সার্ভিসের সিলেবাস সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় কমিশনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ড. মো. নাজমুল আমীন মুজমদার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পরে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম জানান, বর্তমান কমিশন গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ৪৪তম বিসিএসের সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত উভয় ক্যাডারে ৫ হাজার ৩৪৪ জন ও কারিগরি ক্যাডারে ৫৪৪ জনসহ মোট ৫ হাজার ৮৮৮জনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল আগামী জুনের মধ্যে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান আরো জানান, ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার আবশ্যক বিষয়গুলো আগামী ৮ মে থেকে ১৯ মে তারিখে এবং পদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্ভাব্য জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, কমিশনকে পরীক্ষার্থীবান্ধব করতে কর্ম কমিশনের সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অংশীজনের ভাবনা শীর্ষক কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বিসিএসের পরীক্ষা সংস্কারের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ববস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগে প্রশ্নকারক প্রশ্ন প্রস্তুত করে এনে জমা দিতেন। বর্তমানে পিএসসিতে এসে প্রশ্ন প্রণয়ন সম্পন্ন করেন।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ নভেম্বর থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর, ইন্সট্রাক্টরসহ ১২২ ক্যাটাগরির পদে ৩ হাজার ৭১২ প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন প্রেরণ করেছে। ফলাফল প্রক্রিয়ায়ণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করতে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে ব্যবহৃত লিথোকোড ফর্মের ডিজাইন ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, উত্তরপত্র পরীক্ষণের স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে সার্কুলার সিস্টেম চালু করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে কমিউনিটি বেজড ইনভিজিলেটর সিস্টেম চালু করা হবে।
নেক্সট জেনারেশন আনসার স্ক্রিপ্ট ডিজাইন করা হবে। প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের প্রতিরোধে প্রার্থীদের থাম্ব প্রিন্ট সংগ্রহ করে ভেরিফিকেশন পদ্ধতি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
বিসিএসের জট নিরসন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে চলমান ৪টি বিসিএসের জট নিরসন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জট নিরসনের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কোনো পরীক্ষা পেছানোর চিন্তা করছে না।
এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস সম্পন্ন করা সম্ভব কিনা সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪৭তম বিসিএস এক বছর বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল না করে আরো ১০ হাজার পরীক্ষার্থীকে কেন উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলো সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে পিএসসির সদস্য মো. সুজায়েত উল্যা বলেন, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগ সিআইডি তদন্ত করছে এবং তদন্ত শেষে প্রশ্ন ফাঁসের অবৈধ সুবিধাভোগী প্রার্থীরা অবশ্যই শনাক্ত হবে। এমন শনাক্তের পর ওইসব প্রার্থীরা বিসিএস পরীক্ষার নির্বাচন প্রক্রিয়ার যে পর্যায়েই থাকুক না কেন তাদের পরীক্ষার ফলাফল বাতিলসহ সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবার পরীক্ষা বাতিল করা হলে বহু নির্দোষ পরীক্ষার্থীর মূল্যবান সাফল্য হাতছাড়া হয়ে যাবে ও অধিকার ক্ষুন্ন হবে এবং এর ফলে তাদের যে ক্ষতি হবে তা পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।
বিকল্প হিসাবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ যদি প্রথম নির্বাচিত ১০ হাজার ৬৩৮জনের মধ্যে ঢুকে গিয়ে অন্যদেরকে বঞ্চিত করে থাকে, সেক্ষেত্রে আরো কিছু সংখ্যক প্রার্থীকে প্রিলিমিনারিতে নির্বাচিত করে অর্থাৎ cut off কিছুটা নিচে নামিয়ে এরূপ বঞ্চনার অবসান ঘটানো যেতে পারে। আরো সম সংখ্যক অর্থাৎ আরো ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে উত্তীর্ণদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে এ বিষয়টির সমাধানের পক্ষে কমিশন মত দেয়।
আরআর/টিএ