সীমান্তে বাঁধ দিচ্ছে বাংলাদেশ, ড. ইউনূসের মাস্টারস্ট্রোকে ঘুম হারাম ভারতের

ড. ইউনূসের একের পর এক পদক্ষেপে ক্রমাগত দিশেহারা হয়ে পড়ছে মোদি সরকার। বাংলাদেশের উপর ছুরি ঘোরানোর প্রচেষ্টার বিপরীতে নোবেলজয়ীর একেকটি মাস্টারস্ট্রোক যেন কুপোকাত করে দিচ্ছে দিল্লিকে।

দীর্ঘদিনের নতজানু অবস্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এখন ভারতের চোখে চোখ রাখছে বাংলাদেশ। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ মুহুরী নদীতে বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ। আর এই জবাব দেওয়ার শুরুটাও করেছিল ভারতই। গত বছরের আগস্টে বিনা নোটিশে ত্রিপুরা নিজের জমা পানি ছেড়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের শত কোটি টাকার ক্ষতি করেছিল। আকস্মিক বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল লাখ লাখ মানুষকে।

অথচ এখন বাংলাদেশ নিজের সুরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মুহুরী নদীর বেসিনে বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে কর্তৃত্ববাদী মোদি ও তার অনুগত ত্রিপুরা সরকার গর্জে উঠছে। যেন বিচার মানেই “তালগাছ আমার”। ভারত চাইলেই নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসাতে পারবে, আর বাংলাদেশ কিছুই বলতে পারবে না—সেই দিন ফুরিয়েছে। এখন বাংলাদেশ নিজের অধিকারের কথা বলছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক আবহে যে পরিবর্তন এসেছে, তা আর ঢেকে রাখার উপায় নেই। বিশেষত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নয়াদিল্লির কপালে যেন অদৃশ্য ভাঁজ পড়েছে।

নতুন সরকার আত্মনির্ভরশীল নীতিতে অগ্রসর হতে চাইলে প্রতিবেশী ভারত যেন সেটাকে নিয়েছে তার ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে। তা না হলে মুহুরী নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করলেই ত্রিপুরা সরকারের এত অস্থিরতা কেন? এখনো জল আসেনি, বন্যাও হয়নি—তবুও ত্রিপুরা প্রশাসনের মনে জলজটের মতো ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। যেন বাংলাদেশ বাঁধ নয়, রাজনৈতিক প্রতিশোধের প্রাচীর গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। এমন প্রাণবন্ত নদীর দেশ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অথচ প্রকৃতির এই আশীর্বাদকে ভারত গলা চেপে ধরে একের পর এক বাঁধ বসিয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর উপর। প্রতিটি বাঁধ যেন একেকটি অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য। তার ওপর ভারতের দাদাগিরি তো আছেই।

এদিকে মুহুরী নদীর তীরে বাংলাদেশ বড়সড় একটি বাঁধ নির্মাণ করছে শুনেই দক্ষিণ ত্রিপুরায় যেন মৌসুমি আতঙ্কের আগমন ঘটেছে। বর্ষার পানি নামল কি নামল না—তার আগেই পানিতে ভেসে গেছে ত্রিপুরা সরকারের ঘুম। তাইতো তড়িঘড়ি করে পাঠানো হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ মিশন। ত্রিপুরার আশঙ্কা, এই বুঝি বাঁধের পানিতে বিলোনিয়া ডুবে যাচ্ছে।

এদিকে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এই প্রকল্প ঘিরে ভারতীয় সীমান্তের জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে গভীর উদ্বেগ। যেন বাংলাদেশ বাঁধ বানাচ্ছে না, বরং সুনামি ছাড়ছে সীমান্তে। অপরদিকে, এনডিটিভি জানায়, বাঁধ নির্মাণের খবরে দক্ষিণ ত্রিপুরা সীমান্তে উদ্বেগ বেড়েছে। আর তাই জল পর্যালোচনার বদলে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দিতেই তড়িঘড়ি করে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। তাদের আশঙ্কা, এই বাঁধ বর্ষায় বন্যা ডেকে আনতে পারে।

তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি আসলে অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার দায় চাপানোর জন্য একটি নতুন অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা ত্রিপুরা পাবলিক ওয়ার্কস বিভাগের সচিব কিরণ গিত্তে জানিয়েছেন, ভারতও পাল্টা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিচ্ছে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত যেভাবে অন্ধসমর্থন পেয়েছে, এখন সেই প্রতাপের দিন শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতেই ভারত অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছে—বাংলা প্রবাদে যাকে বলে “তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা”।

আরআর/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী সোনার দাম, কিস্তিতে কেনার দিকে ঝুঁকছেন দুবাইয়ের ক্রেতারা Apr 26, 2025
img
টাইমস হায়ার র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে Apr 26, 2025
img
আড়াই কোটি টাকার হেরোইনসহ যুবক আটক Apr 26, 2025
img
নওগাঁয় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৭৩২ মণ চাল জব্দ Apr 26, 2025
img
‘লাল ফাইল’ নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দুই মন্ত্রীর সাক্ষাৎ, কী আছে সেখানে? Apr 26, 2025
img
বেনাপোল বন্দরে চালু হলো পণ্যবাহী ট্রাক স্ক্যানিং কার্যক্রম Apr 26, 2025
img
পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সব মুখ্যমন্ত্রীকে অমিত শাহের কড়া নির্দেশ Apr 26, 2025
img
তারেক রহমানই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, জানালো বৃটিশ গণমাধ্যম Apr 26, 2025
img
ফ্যাসিবাদকে নির্মূল না করা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না: নুর Apr 26, 2025
img
‘গুজব না সত্য—দুদকই বের করবে’ এপিএস ইস্যুতে সজীব ভুঁইয়া Apr 26, 2025