ক্রিকেটারদের বেইজ্জত করা হচ্ছে, বললেন তামিম ইকবাল

ফিক্সিং, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন তামিম ইকবাল। ক্রিকেটারদের “বেইজ্জত-অপমান” করা হচ্ছে বলে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। 

হার্ট অ্যাটাকের পর শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) প্রথম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তামিম। বিসিবির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সময় একাধিক বিষয়ে অসন্তোষের কথা জানান জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

মূলত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএলে) তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ইস্যু নিয়ে বৈঠকে বসে মোহামেডান ও বিসিবি। মোহামেডানের জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার তামিমসহ বেশ কয়েকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনাটি গত ১২ এপ্রিলের। ডিপিএলে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার সৈকতের সঙ্গে সেদিন তর্কে জড়ান মোহামেডানের অধিনায়ক হৃদয়। শুধু মাঠে তর্কে জড়িয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, ম্যাচ শেষে কিছুটা বিতর্কিত সুরে বলেছিলেন, “তিনি (সৈকত) আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হলে আমিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।”

ম্যাচ অফিশিয়ালদের সঙ্গে তর্ক ও তাদের কটাক্ষ করার কারণে ২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান হৃদয়। তবে তার শাস্তি কমানোর জন্য ডিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির কাছে আবেদন করে মোহামেডান কর্তৃপক্ষ। কমিটি তাতে সাড়া না দিলেও তাদের সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হৃদয়ের শাস্তি কমিয়ে এক ম্যাচে নিয়ে আসে বিসিবির আম্পায়ার বিভাগ, অথচ এই এখতিয়ার তাদের নেই।

নিয়ম ভেঙে হৃদয়ের এই শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে বিসিবির চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন সৈকত। তবে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সৈকতের অভিমান ভাঙায় বিসিবির আম্পায়ার বিভাগ এবং সেই এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা নতুন করে দেওয়া হয় হৃদয়কে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা।

এ বিষয়ে তামিমের ভাষ্য, “হৃদয়ের ইস্যুটা... ওকে দুটি ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। তখন কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি!

আম্পায়ার আর ম্যাচ রেফারি মিলে তাকে নিষিদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করতে পারি, সিদ্ধান্তটা কঠোর ছিল, কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তার কিছুদিন পর দেখলাম যে, (নিষেধাজ্ঞা) দুই ম্যাচ থেকে এক ম্যাচ করা হলো; এটা বিসিবি করেছে। তখনও আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তারপর হৃদয় একটা ম্যাচ না খেলে পরের দুটি ম্যাচ খেলল। স্বাভাবিকভাবে ওর যে শাস্তি ছিল, সেটা সে ভোগ করে নিয়েছে। এখন দুটি ম্যাচ খেলার পর গতকাল শুনলাম যে, তাকে আবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

তামিম বলেন, “এটা কোন নিয়মে, কীভাবে করা হয়েছে- তা আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। এটা হাস্যকর ছিল।

কোনোভাবেই সে নিষিদ্ধ হতে পারে না, যে কি-না আগেই (একবার) নিষিদ্ধ হয়েছে। বিসিবি তাকে দুটি ম্যাচ খেলতে দিয়েছে। তাকে আবার আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারেন?”

এছাড়া, ডিপিএলের চলতি আসরে একটি ম্যাচকে ঘিরে ফিক্সিংয়ের সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুরের ম্যাচকে ঘিরে ওঠা সেই সন্দেহের ম্যাচটি নিয়ে বিসিবির তদন্ত চলছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে গত ১০ এপ্রিল শাইনপুকুরের দুই ক্রিকেটার রহিম আহমেদ ও মিনহাজুল আবেদীন সাব্বিরকে মিরপুরে ডাকা হয়। এই দুজন স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে উপস্থিত হয়ে বিসিবি কর্মকর্তাদের সামনে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ের সেই ঘটনা পুনরায় মঞ্চায়ন করে দেখান। উইকেটের দুই পাশে দুটি ক্যামেরায় ধারণ করা হয় সেই দৃশ্য। মিডিয়াকর্মীরাও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, মিডিয়ার সামনে এই দুই ক্রিকেটারকে দিয়ে অভিনয় করানোর কোনো অধিকার কারও নেই।

তামিম বলেন, “আমরা এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডকে সরাসরি বলেছি যে দেখেন, যদি ওখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে বা কোনো খেলোয়াড় কোনো ধরনের দোষ করে থাকে, আমরা সবাই চাই এটার (জন্য) শাস্তি হোক; এতে আমরা শতভাগ একমত। কিন্তু তার মানে এটা না যে, আপনি ওই দুটি ছেলেকে নিয়ে গিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন, এমনটা করার অধিকার কারো নেই।”

তিনি বলেন, “বিশ্বের কোথাও দুর্নীতি দমন ইউনিটে এমন নিয়ম নেই যে, একই জিনিস অভিনয় করিয়ে আপনি ওই দুটি ছেলেকে বেইজ্জত করবেন মিডিয়ার সামনে। এটা খেলোয়াড়দের অপমান করা। এই জিনিস নিয়ে আমরা একবিন্দুও খুশি ছিলাম না।”

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরে কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে। যাদের নাম গণমাধ্যমে আসায়ও বিসিবিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তামিম।

তিনি বলেন, “বিপিএলেও ১০ জনের নাম ফাঁস হয়েছে বিসিবির ভেতর থেকে; ১০ জনের ছবি মিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই চাই, ওখান থেকে কেউ যদি দোষী হয়, তার শাস্তি হোক। কিন্তু তাদের মধ্যে যদি দুজন বা আটজনও নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়।”

এমন প্রশ্ন রেখে তামিম তাদের নামগুলো জনগণের সামনে ফাঁস করে দেওয়াকে “অপমানজনক” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এই প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হলো ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের যদি এভাবে ট্রিট করা শুরু করেন, তাহলে তো হলো না! এই জিনিস নিয়ে আমরা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছি আসতে। উনি এসেছেন, সঙ্গে আরও দুজন পরিচালক (নাজমুল আবেদীন ও ইফতেখার আহমেদ) ছিলেন। আমরা লম্বা আলোচনা করেছি। আমাদের পয়েন্ট তুলে ধরে উনাকে বলেছি যে, (বিষয়গুলো নিয়ে) আমরা আপসেট।”

তামিম বলেন, “এসব নিয়ে আমাদের বিতর্ক হয়েছে। উনাদের আমরা সুন্দর করে (নিজেদের) অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে আমরা কী অনুভব করি। তারপর উনারা উনাদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবেন।”

 আরএম/এনএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শান্তি আমাদের অগ্রাধিকার, দুর্বলতা নয়: শাহবাজ শরিফ Apr 26, 2025
img
‘আমাদের নিয়ত পরিষ্কার, আমরা যা বলেছি, আমরা তাই করব, ইনশাআল্লাহ’ : তারেক রহমান Apr 26, 2025
img
কোয়েলের প্রত্যাখ্যান ভাগ্যের মোড় ঘুরিয়েছিল কঙ্গনার Apr 26, 2025
img
‘গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে’ Apr 26, 2025
বাংলাদেশের মানুষ জানে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান Apr 26, 2025
img
জনগণকে পেন্ডুলামের মতো দোল খাওয়ানো হচ্ছে : রিজভী Apr 26, 2025
পা''কি/স্তানে''র যে পোশাক ঢাকায় পাওয়া যাচ্ছে Apr 26, 2025
আ.লীগকে নি/ষি''দ্ধে'র দাবিতে যা বললেন শিবির সেক্রেটারি Apr 26, 2025
সেনাবাহিনীকে নিয়ে কি ষ/ড়''য'ন্ত্র হচ্ছে Apr 26, 2025
ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে জুলাইয়ে জামায়াত ভূমিকা নিয়ে যা বললেন আলী রিয়াজ Apr 26, 2025